চট্টগ্রামে খেলাপি ঋণ আদায় সংক্রান্ত মামলার জট কমাতে বিদ্যমান একটি অর্থঋণ আদালতের পাশাপাশি আরও দুটি নতুন আদালত সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বর্তমানে চট্টগ্রামে অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা দাঁড়ালো তিনটিতে। আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগ থেকে সমপ্রতি জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন এ দুটি আদালত সৃষ্টি করা হয়। এছাড়া এ দুটি আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য দুজন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মূলত চট্টগ্রামে অর্থঋণ মামলা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিচ্ছিল। মামলার চাপ কমাতে এবং দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতেই নতুন আদালত দুটি গঠন করা হয়।
এদিকে নতুন দুটি অর্থঋণ আদালত সৃষ্টি, এরপর এ দুটি আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হলেও কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। বিচারক কোথায় বসবেন বা কোথায় বসে বিচার কার্য পরিচালনা করবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। এ দুটি আদালতের জন্য সাঁটলিপিকার–কাম–কম্পিউটার, সেরেস্তাদার, বেঞ্চ সহকারী, রেকর্ড সহকারী ও অফিস সহায়কের পদ সৃজন করা হলেও এখনো এসব পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে নতুন করে সৃষ্ট দুটি অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগেই বিচারক কোথায় বসবেন তা নির্ধারণ হয়ে যাবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কর্মচারীদেরও নিয়োগ করা হবে।
আইনজীবীরা বলছেন, নতুন করে সৃষ্টি হওয়া দুটি অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে অর্থঋণ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতসূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে ৬ হাজার ৩৩৯ টি খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মোকদ্দমা রয়েছে। এরমধ্যে বিচারাধীন অর্থঋণ মোকদ্দমার সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৬ টি, অর্থঋণ জারি মোকদ্দমা ৪ হাজার ৪৫৮ টি এবং অন্যান্য মোকদ্দমা রয়েছে ১৪৫ টি।
অর্থঋণ আদালতসূত্র জানায়, বর্তমানে বিদ্যমান অর্থঋণ আদালতে প্রতিদিনই মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ১২০ টিরও বেশি মামলা। নতুন দুটি আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে নিষ্পত্তির এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনামুল হক আখন্দ দৈনিক আজাদীকে বলেন, নতুন যে দুটি অর্থঋণ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর কার্যক্রম কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। আজকে (গতকাল) একটি মিটিং হয়েছে। আগামীকালও (আজকে) হবে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই এসব ঠিক হয়ে যাবে। নতুন দুটি আদালতের জন্য নিয়োগ পাওয়া দুজন বিচারক আগামী ২০ জুন যোগদান করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, তার আগেই সবকিছু নির্ধারণ করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি মো. হাসান আলী চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি সবসময় ছিল। সেই অনুযায়ী নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানোটা নিশ্চিতভাবেই ভালো হয়েছে। এখন বিচারক কোথায় বসবেন বা কোথায় বসে বিচারক তার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে দ্রত আদালতের কার্যক্রম শুরু করে দিতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে অর্থঋণ সংক্রান্ত অসংখ্য মামলা বিচারাধীন। কিন্তু আদালত একটি। ওই একটি আদালত দিয়ে প্রত্যাশিতভাবে মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছিল না। আমরা আশা করছি, নতুন দুটি আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা যেমন অনেক বেড়ে যাবে, একই সাথে খেলাপী ঋণ আদায়ের পরিমাণও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে সৃষ্টি হওয়া নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতের জন্য গত ২ জুন দুজন বিচারক নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়। তারা হলেন, মো. হাসিবুল হাসান ও মো. ফরহাদ রায়হান ভূঁইয়া।