দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘অমর একুশে বইমেলা–২০২৫’ আগামীকাল শনিবার নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে শুরু হচ্ছে। ২৬ দিন ব্যাপী এবারের মেলায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার ১০৭ প্রকাশনা সংস্থার ১৪০টি স্টল থাকবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৬৩ প্রকাশনা সংস্থার ৪১টি সিঙ্গেল ও ২২টি ডাবলসহ স্টল থাকবে ৮৫টি। ঢাকার ৪৪ প্রকাশনা সংস্থার ৩৩টি সিঙ্গেল ও ১১টি ডাবলসহ স্টল থাকবে ৫৫টি। গতবার (২০২৪) ২৩ দিন ব্যাপী বইমেলায় ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ৯২ প্রকাশনা সংস্থার ১৫৫টি স্টল ছিল। অর্থাৎ এবার স্টল সংখ্যা কমলেও বেড়েছে প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা এবং মেলার সময়সীমা। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বইমেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প–সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করবেন। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ২০১৯ সাল থেকে সম্মিলিত উদ্যোগে এ মেলা হয়ে আসছে। প্রতিবার জিমনেশিয়াম মাঠে হলেও গতবার সিআরবি শিরীষতলা মাঠে এ মেলা হয়েছে। ওই হিসেবে একবছর পর আবারও পুরনো প্রাঙ্গণে ফিরছে বইমেলা।
মেলার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার মেলা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে সিআরবি থেকে মেলা জিমনেশিয়ামে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি গতবারের চেয়ে এবার মেলা জমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন গৃহায়ন, গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার অভিজাত প্রকাশনী সংস্থাগুলো মেলায় অংশ নিচ্ছে এবং তাদেরকে স্টলও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এক লাখ বর্গফুটের মাঠ জুড়ে ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ডা. শাহাদাত বলেন, এবার মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগার। মেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত থাকবে। মেলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সার্বিক সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। মেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে। আশা করি এই মেলায় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের লেখক–পাঠক ও সৃজনশীল নাগরিকদের অংশগ্রহণে সংস্কৃতি ও মননের উৎকর্ষের পাশাপাশি ইতিহাস–ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে। এছাড়াও জাতীয় জীবনে যেসব ব্যক্তি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের মাসব্যাপী বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে– রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য ও ছাত্র সমন্বয় উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা লেখক–কবি–সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় থাকছে– নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ও সেলফি কর্নার। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার আন্দোলনের উপর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত নিজের পাশের চেয়ার থেকে সরিয়ে দেন বইমেলা কমিটির সচিব ও চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন হাসান বাবুকে। বিষয়টির সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ–এর কয়েকজন সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মেয়রের একপাশে বসেন মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং অন্য পাশে বসেন মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু। এসময় বাবু মাইক্রোফোনে মঞ্চে কারা উপস্থিত আছেন তাদের নাম ঘোষণা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এসময় হঠাৎ রেগে গিয়ে মেয়র বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘উপস্থাপক ওইদিকে যান’। এক পর্যায়ে বাবু সেখান থেকে সরে যান এবং তার আসনে বসেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এরপর মেয়র মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে লিখিত বক্তব্য পড়তে শুরু করেন।
এদিকে মেয়র হঠাৎ রেগে গিয়ে সংগঠনের সভাপতিকে তার বসার আসন থেকে সরিয়ে দেয়ায় মঞ্চের সামনে বসা চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ–এর সদস্যরা গুঞ্জন শুরু করেন। চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ–এর কয়েকজন সদস্য ও প্রকাশক আজাদীকে জানান, কর্পোরেশন আয়োজক হলেও প্রকাশকরা অংশ না নিলে মেলা সফল হবে না। প্রকাশকদের প্রতিনিধি হিসেবেই মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন হাসান মঞ্চে বসেন। যেহেতু কোন আসনে কে বসবেন তা পূর্বনির্ধারিত ছিল না তাই বাবু মেয়রের পাশেই বসেছেন। সংবাদ সম্মেলনের পরে আসা চসিক সচিবকে মেয়র তার পাশে বসাতে চাইলে স্বাভাবিকভাবে বলতে পারতেন। কিন্তু সবার সামনে প্রকাশ্যে সংগঠনের সভাপতিকে অনেকটা জোর করে আসন থেকে সরিয়ে দেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ এর মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, আলী প্রয়াস, সিডিএ বোর্ড মেম্বার জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) সভাপতি মো. শাহ নেওয়াজ, শামসুল হক হায়দরী ও মুস্তফা নঈম।