রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গত মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়ে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি। উপাচার্য রাষ্ট্রপতিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রপতি এতে সম্মতি প্রকাশ করেন এবং চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম সমাবর্তনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণের জন্য উপাচার্যকে নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়া উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
১৭ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের দক্ষ, যোগ্য ও আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সেই লক্ষ্যে যুযোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন করার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা বিজ্ঞান ও তথ্য–প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া খুবই জরুরি। তিনি আশা করেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রসারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। শিক্ষার্থীরা যাতে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস–ঐতিহ্যসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন রাষ্ট্রপতি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু তাহেরের জন্য আমরা শুভ কামনা জানিয়ে বলতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পৃথিবীর যে কোনো দেশেই সবচেয়ে বেশি মর্যাদা ও সম্মানের। কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু শিক্ষক এমন কিছু কর্ম করছেন যাতে কি না অনেক সময়ই তাঁদের মর্যাদা ধুলোয় মিশে যায়। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ‘জব স্যাটিসফ্যাকশন’ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষেরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী ও যোগ্যতর শিক্ষক আছেন। কিন্তু দুএকটি ব্যতিক্রম বাদে, তাঁরা উপাচার্য পদে নিয়োগ পান না। তাঁদের অধিকাংশই নিয়োগ পেয়েই অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ তাঁদের কাছে গুরুত্ব পায় না। এটাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য পদের মর্যাদা এবং শিক্ষার মান রক্ষার প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন তাঁরা। শুধু একটি দুটি নয়, প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ, যিনি উপাচার্য হন, দল ভারী করতে তিনি অনুগতদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। অথচ, একজন উপাচার্যকে হতে হয় প্রথমত ‘সম্মান ও শ্রদ্ধার’, তারপর ‘বিশ্বাস ও আস্থার’। শিক্ষার্থীরা যখন দেখবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি একজন সৎ ও যোগ্য মানুষ, ভালো শিক্ষক, খ্যাতিমান গবেষক, বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের প্রতিনিধি, তখন অমন ব্যক্তি হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য তারা তাদের শিক্ষকের পদাংক অনুসরণ করবে অবশ্যই।
২০২২ সালের নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সাবেক রাষ্ট্র্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছিলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম এবং এর অনেক পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের দেখলে বা তাঁদের কথা শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত। কিন্তু ইদানীংকালে কিছু উপাচার্য ও শিক্ষকের কর্মকাণ্ডে সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গাটা ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা, মূল্যায়ন ও উন্নয়নকে ঘিরে; কিন্তু ইদানীং পত্রিকা খুললে মনে হয়, পরিবার–পরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক সুযোগ–সুবিধা নেয়াই যেন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব।’
শিক্ষা–সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপাচার্যকে উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষকসহ যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।’ আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু তাহের নিজ গুণে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। বিগত উপাচার্যের সময়ে যতসব উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, কেবল সেগুলো মাথায় রেখে কাজ করবেন। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার করালগ্রাসের বলয় থেকে মুক্ত থেকে সদর্পে অগ্রসর হবেন। কাজ করবেন স্বচ্ছতার মাধ্যমে। আমরা চাই, উপাচার্যের নেতৃত্বে ও ছাত্র–শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হোক গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে।