সেতুটির দুই প্রবেশমুখ ও চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া। সেতুর বেশিরভাগ পাটাতন ভেঙে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো সেতুটি নড়বড়ে ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এছাড়া সেতুর চারপাশে শ্যাওলা ও জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়েছে পুরো সেতু। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত সেতুর বর্তমান চিত্র এটি। সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পাশে খালের ওপর নির্মাণ করা হয় ঝুলন্ত সেতুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল আকর্ষণ ছিল রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু আদলে গড়া এ সেতুটি। শিক্ষার্থীদেরও প্রিয় জায়গা ছিল এটি।
২০১৮ সালের শেষের দিকে সেতুটির কিছু অংশ ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হলে কাঁটাতার দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আর মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। এখন পর্যন্ত সেতুটি একই অবস্থায় রয়েছে। অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পুরো সেতুই অকেজো হয়ে পড়েছে। গত প্রায় পাঁচ বছরেও সেতুটি সংস্কার করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ ও দৃষ্টিনন্দন সেতুটি ছিল শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্থানগুলোর শীর্ষে। চবির প্রয়াত উপাচার্য প্রফেসর আবু ইউসুফের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থীর অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না করায় ধ্বংস হতে চলেছে নান্দনিক সেতুটি। সেতুটি দ্রুত সংস্কার করার কথা বারবার জানানোর পরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে তারা কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানিয়েছে, তবে বাস্তবে তা দেখা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কার করতে বেশি লাগার কথা না। কিন্তু প্রসাশনের সদিচ্ছার অভাবে এটি সম্ভব হচ্ছে না। যে কাজটি এক সপ্তাহের সে কাজটা আজ প্রায় পাঁচ বছরেও হচ্ছে না। সমাজতত্ত্ব বিভাগের রাসেল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তের সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ এ সেতুটি দেখতে আসে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সংস্কারের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেতুটি বন্ধ করে রেখেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ফজল আজাদীকে বলেন, চবির ঝুলন্ত সেতুটি এখনও বন্ধ আছে। চলাচলে ঝুঁকি থাকায় সেতুটি বন্ধ রয়েছে। এটি মেরামতের বিষয়ে অফিশিয়ালি কোনো নির্দেশনা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটি মেরামত করার জন্য আমরা একটা ইস্টিমেট করেছি। ফান্ড না থাকায় কাজ হচ্ছে না। এটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ আজাদীকে বলেন, আমি নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেতুটি নিয়ে কোনো চিঠি আসেনি। এটা পরিকল্পনা উন্নয়ন বিভাগ আর প্রকৌশল দপ্তর বলতে পারবে। তবে আশা করি এটি ঠিক হয়ে যাবে।
অপরদিকে ভর্তি পরীক্ষার পর সেতুটি মেরামত করা হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার। তিনি বলেন, আমাদের এটা নিয়ে পরিকল্পনা আছে। এ ভর্তি পরীক্ষার পর সেতুটির কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলবো।