চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ে কাজ বেড়েছে, বাড়েনি সক্ষমতা

আজ বিশ্ব মান দিবস ।। মনিটরিং কম, পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষাগার না থাকায় সমস্যা

জাহেদুল কবির | শনিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

দেশের একমাত্র মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের কাজের পরিধি বাড়লেও সক্ষমতা সেভাবে বাড়েনি। জনবল সংকটসহ পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষাগার না থাকায় অধিকাংশ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলা ছাড়াও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি করা হয় অথচ এই জেলায় মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট চাহিদার অর্ধেক জনবলও নেই।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের নাকের ডগায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন লোগো ব্যবহার করে খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে। এসব ক্ষেত্রে আবার ওইসব পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকে না। মূলত বিএসটিআইয়ের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব পণ্যের ভোক্তারা। এছাড়া ওজন স্কেলে (বাটখারা) বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সেটি মানছে না। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, যে সকল প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর তালিকা ধরে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে না। বিএসটিআই আইন২০০৩ (সংশোধনী)-এর ৮ ধারা অনুযায়ী, অনুমোদন ছাড়া বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়। শাস্তি হিসেবে ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, দুই বছরের জেল অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ে বিএসটিআইয়ের মনিটরিং জোরদার করাও সম্ভব হচ্ছে না। বিএসটিআইয়ের সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) বিভাগে একজন উপপরিচালক, তিনজন সহকারী পরিচালক ও ৮ জন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা দিয়ে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে কাজ চালাতে হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে মেট্রোলজি বিভাগে। সেখানে একজন উপপরিচালক, দুইজন সহকারী পরিচালক এবং ৫ জন পরিদর্শক দিয়েই মূলত কাজ চালাতে হচ্ছে। অপরদিকে টেস্টিং ফিজিক্যালে একজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক এবং সিনিয়র পরীক্ষক রয়েছে। এছাড়া টেস্টিং কেমিক্যাল বিভাগে পরীক্ষক আছেন মাত্র ৫ জন। উপপরিচালক ১ জন, সহকারী পরিচালক ৩ জন এবং ৭ জন পরীক্ষক রয়েছেন এ বিভাগে।

জানা গেছে, আমদানি নীতিতে তালিকাভুক্ত ৭৯টি পণ্য বন্দর থেকে খালাসে বিএসটিআই থেকে আমদানিকারকদের সনদ নিতে হয়। বিএসটিআইয়ের ল্যাবে উন্নত যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ের মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ‘মান’ নিয়ে তুলছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ঢাকায় পণ্যের নমুনা পাঠানো থেকে শুরু করে রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত এক সপ্তাহ সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরা আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে জানা গেছে।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএসটিআইয়ের মূল তদারকির কাজ চারটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে টেস্টিং কেমিক্যাল, টেস্টিং ফিজিক্যাল, মেট্রোলজি ও সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম)। বিএসটিআই দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ২৭৫টি পণ্য নজরদারি করে। এসব পণ্যের মধ্যে চট্টগ্রামে ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছে ১০৭টি পণ্যের। এছাড়া ফিজিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাচ্ছে ২৪টি পণ্যের। তবে পানি, গুড়ো দুধের মেলামিন, ফায়ার এঙটিংগুইসারের মান, ত্বকের বিভিন্ন প্রসাধনী, ইলেকট্রিক মিটারের মান, লিখা এবং ছাপাখানার কাগজ পরীক্ষা এবং শিশু খাদ্যের পরীক্ষাও ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রী টাইলস, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল, কলম, সস, জুস, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, পেনসিল এবং চকলেট জাতীয় পণ্যের পরীক্ষা চট্টগ্রাম ল্যাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিএসটিআইয়ে কাজের চাপ বেড়েছে। তবে বর্তমানে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। নতুন ভবনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে রাসায়নিক পরীক্ষাগারের (ল্যাব) সক্ষমতা বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ অস্থায়ী ভবনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের জায়গা নেই। আমরা আশা করি চলতি ২০২৩২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে আমরা নতুন ভবনের কার্যালয়ে স্থানান্তর করতে পারবে। তখন বিএসটিআইয়ের কাজের গতিও বেড়ে যাবে। আমাদের বর্তমানে পরীক্ষা নিরীক্ষা কাজের চাপ বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর ৫০ স্পটে তিন গ্রুপে সক্রিয় ৬০ পকেটমার
পরবর্তী নিবন্ধনিউজিল্যান্ড পরীক্ষায়ও ফেল বাংলাদেশ