চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর

দেশের ব্যবসা বাণিজ্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে দাবি ব্যবহারকারীদের

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ব্যবহারকারীদের চরম আপত্তির মুখে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ। এক মাস স্থগিত রাখার পর ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে বিভিন্ন সেবাখাতে বাড়ানো ট্যারিফ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর ব্যবহারকারীরা বর্ধিত ট্যারিফ অন্তত এক বছরের জন্য স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুরের সই করা এক নোটিশে ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের ব্যাপারটি জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব জাহাজ, কন্টেনার ও কার্গো বিল নতুন রেট অনুযায়ী নেওয়া হবে। একইভাবে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিসহ সব বন্দর ব্যবহারকারী বর্ধিত হারে মাশুল পরিশোধ করবেন। তালিকাভুক্ত সব শিপিং এজেন্টকে তফসিলি ব্যাংকে তাদের হিসাব নম্বরে বর্ধিত হারে যথাযথ অর্থের সংস্থান রেখে আসা জাহাজের ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বন্দরের বিভিন্ন সেবাখাতে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ওইদিন থেকে তা কার্যকর করার কথা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। এতে বন্দর ব্যবহারকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা তাদের সাথে আলোচনা চূড়ান্ত না করে এভাবে হুট করে ট্যারিফ বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পরবর্তীতে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ২০ সেপ্টেম্বর তা এক মাসের জন্য স্থগিত রাখেন।

বন্দরে বর্তমানে ৫২টি খাতে মাশুল আদায় হয়। এর মধ্যে ২৩টি খাতে সরাসরি নতুন হারে ট্যারিফ কার্যকর করা হচ্ছে। গেজেট অনুযায়ী ভাড়া, টোল, ফি ও মাশুল ডলারের বিনিময়মূল্যের ভিত্তিতে আদায় করা হবে। প্রতি ডলারের হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। হার বাড়লে মাশুলও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে বলেও উল্লেখ করা হয়। বর্ধিত ট্যারিফে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে সবচেয়ে বেশি মাশুল নির্ধারণ করা হয়। প্রতি ২০ ফুটি কন্টেনারের ট্যারিফ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগে ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। এতে গড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। আমদানি কন্টেনারে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কন্টেনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা বেশি দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি কন্টেনার ওঠানামার ক্ষেত্রেও প্রায় ৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ যুক্ত হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে ২৫ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বৃদ্ধি পাবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের ঘোষণা দিলেও ব্যবহারকারী বিষয়টি দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, আমাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে ট্যারিফ বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। যে হারে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে তাতে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে, যা মূলতঃ দেশের সাধারণ ভোক্তাদের পরিশোধ করতে হবে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। একাধিক শিল্পপতি বলেছেন, আমরা এক বছর সময় চেয়েছিলাম। সেটি দেয়া হলো না। আমরা একসাথে এতো বিপুল ট্যারিফ না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম, তাও কানে নেয়া হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো আচরণ করছে বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ার সন্ত্রাসী তোফায়েলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিল জনতা