অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর নিস্তার পেলো জাহাজ জট থেকে। গতকাল বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। একই সাথে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের পাহাড়ও কমেছে। মাত্র দিন কয়েকের ধকল সামলাতে প্রায় তিন মাস লেগে গেলো বলে মন্তব্য করে বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, বন্দরের জট নিরসন হওয়ায় দেশের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে।
সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কারফিউ এবং সৃষ্ট ছাত্র–গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কারখানা থেকে আইসিডি হয়ে বন্দরে কন্টেনার আনা নেয়া, জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাস এবং উঠানোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল মারাত্মকভাবে। আইসিডিগুলোতে জমা হয়েছিল বন্দরমুখি কন্টেনারের পাহাড়, অপরদিকে বন্দরের ইয়ার্ডে আইসিডিমুখী কন্টেনারের বিশাল জট তৈরি হয়েছিল। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ব্যাহত হওয়ায় বন্দরে বার্থিং নেয়া জাহাজগুলোকে বাড়তি সময় দিতে হচ্ছিল। অপরদিকে বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা হাজার হাজার কন্টেনার নিয়ে বহির্নোঙরে আটকে থাকছিল জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এক সপ্তাহ থেকে দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষমান ছিল গিয়ারলেস এবং গিয়ারড ভ্যাসেল। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাচ্ছিল। ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরও কয়েকদিন বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় মারাত্মকভাবে। এই সময় বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা ১০/১২টিতে গিয়ে ঠেকে। বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ৪৪ হাজার টিইইউএস ছুঁয়ে যায়।
পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠার পর বন্দরের নতুন চেয়ারম্যানসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। নানা ধরণের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি এবং বাস্তবায়ন করেছেন। দ্রুত কন্টেনার খালাসের জন্য আমদানিকারক এবং আইসিডিগুলোকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। এতে কাজে কর্মে গতি আসলেও বন্দর রক্ষা পাচ্ছিল না জাহাজ এবং কন্টেনার জট থেকে। মাত্র কয়েকদিনে জমে যাওয়া জাহাজ এবং কন্টেনার জট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে নিস্তার পেতে অন্তত তিন মাস ধরে কাজ করতে হয়েছে। অবশেষে গতকাল সেই সুফল পুরোপুরি ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। প্রায় তিনমাস পর গতকালই প্রথম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা মাত্র একটিতে নেমে আসে। ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা নেমে আসা ৩৬ হাজার ৭৮০ টিইইউএস। আজকালের মধ্যে বার্থিং নেয়ার জন্য জাহাজের অপেক্ষা করার পালা পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সূত্র বলেছে, গতরাতে আরো তিনটি জাহাজ আসতে পারে। এগুলো আজ বার্থিং পেতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে একইসাথে ১০টি কন্টেনার জাহাজ বার্থিং নিতে পারে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত রাখা গেলে বিদেশ থেকে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজগুলো আবারো কোন অপেক্ষা না করে সরাসরি জেটিতে বার্থিং নিতে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, জটমুক্ত বন্দর শিপিং সেক্টরের জন্য বড় ধরণের আশীর্বাদ। এতে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে বন্দরের ইমেজ বৃদ্ধি পায়। দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে জটমুক্ত বন্দর বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন্দরে পুরোদমে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। জাহাজ বা কন্টেনার জট নেই। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে স্বাভাবিক গতিশীলতা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।