চট্টগ্রাম থেকে ফেনী গেল অর্ধশতাধিক সাম্পান

বানভাসিদের বাঁচাতে নানা সামগ্রী নিয়ে ছুটছেন চাটগাঁর মানুষ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

মানবতার এক অনন্য জয়গান চলছে চট্টগ্রামে। ফেনী ও কুমিল্লার বানভাসি মানুষকে বাঁচাতে চট্টগ্রামের হাজারো মানুষ নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে রাস্তায় নেমেছেন। তারা নানা ধরনের শুকনো খাবার দাবারের পাশাপাশি নৌকাসহ জীবনরক্ষাকারী নানা সামগ্রী নিয়ে ছুটছেন ফেনী, কুমিল্লা বা নোয়াখালীর বন্যাদুর্গত এলাকায়। গতকাল দিনভর নৌকা কেনা এবং ভাড়া নেয়ার জন্য অভিয়মিত্র ঘাট এবং ব্রিজঘাটসহ বাংলাবাজারে ভিড় করেন। কর্ণফুলী নদীতে চলাচলকারী অধিকাংশ সাম্পান নৌকা ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দুর্গত অঞ্চলে।

ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানি, পাহাড়ি ঢল এবং অতিভারী বৃষ্টির পানিতে ফেনি, কুমিল্লা এবং নোয়াখালীসহ বিস্তৃত এলাকা পানির নিচে। কোথাও কোথাও দোতলা ঘর পর্যন্ত ডুবে যাওয়ার কথা ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাঁচার আকুতি সর্বত্র। কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার এক ভয়াল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, চুলা জ্বালানোর অবস্থা নেই, শুকনো খাবার নেই, দোকানপাট নেই। চারদিকে শুধু নেই নেই অবস্থার মাঝে আছে শুধু বাঁচার আকুতি, সহানুভূতির প্রত্যাশা। আচমকা ধেয়ে আসা বানে বুধবার রাতভর নির্ঘুম সময় কাটিয়েছে দেশের মানুষ।

গতকাল সকালের আলো ফোটার সাথে সাথে হুমড়ি খেয়ে মানুষ মাঠে নামেন।

তুমুল বর্ষণের মাঝে নিজেদের যা আছে তা নিয়ে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান চট্টগ্রামের হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক সংগঠন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাধারণ শিক্ষার্থী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নিজেদের সামথ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা এর ওর কাছে হাত বাড়িয়ে সংগ্রহ করেন প্রয়োজনীয় অর্থ। সেই অর্থ দিয়ে শুকনো খাবারসহ নানা সামগ্রী, লাইফ জ্যাকেট কিনেন। বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের জন্য কেনা হয় নৌকা, ইঞ্চিন চালিত বোট, ভাড়া নেয়া হয় স্পিড বোটসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান। চট্টগ্রাম থেকে ছোট নৌকা নিয়ে নৌপথে ফেনী, কুমিল্লা বা নোয়াখালী অঞ্চলে যাওয়া সম্ভব না বিধায় ভাড়া করা হয় ট্রাক। ক্রেন দিয়ে ট্রাকে নৌকা বোঝাই করে ছুটছে দুর্গত অঞ্চলে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেখা দেয়া ভয়াল জ্যাম যাতে নৌযান পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে সে জন্য স্থানীয় মানুষেরা রাস্তার জ্যাম সামলে নৌকা বোঝাই ট্রাকগুলো পার করে দেয়। সবকিছু মিলে এক অনন্য সম্প্রীতি, ভালোবাসা এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অবর্ণীয় এক চেষ্টা গতকাল দিনভর পরিলক্ষিত হয়েছে।

নগরীর বাংলাবাজার, অভয়মিত্র ঘাট এবং ব্রিজঘাটের নৌকার মাঝিরা বলেছেন, প্রচুর নৌকাসহ বিভিন্ন ধরণের নৌযান গেছে চট্টগ্রাম থেকে। সীতাকুণ্ডের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ‘লালবোট’ খ্যাত জাহাজের লাইফবোটগুলো নিয়েও ছুটছেন বহু মানুষ। প্রচুর চাহিদার জন্য অনেকেই নৌকা কিনতে বা ভাড়া নেয়ার সুযোগ পাননি। তারা শুকনো খাবারসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ছুটছেন দুর্গত অঞ্চলে।

গতকাল চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক ভাড়া ৩ হাজার টাকা করে অনেকেই সাম্পান ভাড়া করে নিয়ে গেছেন। ট্রাক ভাড়া নেয়া হয়েছে ৯ হাজার টাকা করে। অবশ্য কারো কারো কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সহায়তাকারীরা বাড়তি ভাড়া দিয়ে হলেও নৌকা এবং সাম্পান ভাড়া করে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

কর্ণফুলী ব্রীজ ঘাট সাম্পান চালক সমিতির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ঘাটে মোট সাম্পান রয়েছে ১২০টি। যার মধ্যে ৫০টি সাম্পান ফেনীর উদ্দেশ্যে রাওনা দিয়েছে। সাম্পান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার। তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে বলেও দাবি করেন। সাম্পান ভাড়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পার্থক্য ও সাম্পানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি অভিযোগ পেয়ে সাম্পান ঘটে আসে সেনাবাহিনীর একটি টিম। সেনা কর্মকর্তারা দুই পক্ষের কথা শুনে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। তারা সাম্পান চালক নেতাদের সতর্ক করেন যাথে যথাযথভাবে সাম্পান সরবরাহ করে। কোনোভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করে এবং বাড়তি ভাড়া আদায় না করে।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর অভয়মিত্র ঘাটের চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতির নেতাদের দাবি, ইতোমধ্যে ১৫০ টি সাম্পান ফেনীর উদ্দেশ্যে রাওনা হয়েছে। প্রয়োজনে মাছ ধরার বোট ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে অনেকে। তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। সাম্পান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার টাকা। মাঝিরঘাট ট্রাক চলকদের দাবি, তারা ট্রাক ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৯ হাজার টাকা করে। মানবিক কাজে সহযোগিতার কমতি নেই বলে দাবি তাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরও ৪ ফুট পানি বাড়লেই কাপ্তাই লেকের গেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হবে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি