চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং কক্সবাজারসহ দেশের ২৬টি রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পথে পথে আন্দোলনকারীদের অবস্থান এবং ব্যারিকেডের কারণে গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো রাতেও ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি। কোটা সংস্কার ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করলে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকেরা বলেছেন, নানা সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার অভাবে তারা বাস চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন। একেকটি বাসের দাম এক থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত। এগুলো পুড়িয়ে দিলে মালিককে পথে বসতে হবে। এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তবে তাদেরকে টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কবে আবার বাস চলাচল করবে তা নিশ্চিত না হওয়ায় দূর দূরান্ত থেকে চট্টগ্রামে আসা অনেক মানুষ আটকা পড়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এবং ঢাকাসহ দেশের মোট ২৬টি রুটে শত শত বাস চলাচল করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গের অনেক জেলার সাথেও চট্টগ্রামের সরাসরি বাস চলাচল করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সড়ক–মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করেন। এতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশসহ আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ঘটেছে হামলা এবং পাল্টা হামলার ঘটনা। পরিস্থিতির অবনতিতে সড়ক– মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় রাস্তায় আটকা পড়ে অনেক যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন গাড়ি। কোনো কোনো এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম থেকে দেশের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেসব যাত্রী বাসে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারে এসেছিলেন তাদেরকে টিকেটের মূল্য ফেরত দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকাল থেকে বহু যাত্রীকে দামপাড়া, একে খানসহ বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ফেরত যেতে দেখা গেছে।
আরশাদুল আলম নামে রাজশাহীর এক বাসিন্দা গতকাল বিকালে দামপাড়া দেশ ট্রাভেলসের কাউন্টার থেকে ফেরত যাওয়ার সময় অনেকটা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলাম। এখন চট্টগ্রামে এসে আটকা পড়ে গেলাম। হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই। কোথায় থাকব, কোথায় খাব বুঝতে পারছি না।
শুধু আরশাদুল আলম নন, আরো অনেক ব্যক্তিকে এভাবে ফিরে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ পরিবার পরিজন নিয়েও সমস্যায় পড়েছেন।
দামপাড়া শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বাস ছাড়ছি না। পরিস্থিতি বাস চলাচলের উপযোগী না। সকালে যেসব বাস ছেড়েছি সেগুলো এখনো কুমিল্লার চান্দিনায় আটকে আছে।
সোহাগ পরিবহনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাস ছাড়ছি না। আমাদের সব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু সহিংস ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। বাস ছাড়ার পরিস্থিতি নেই।
স্বাধীন ট্রাভেলসের একজন কর্মকর্তা গত রাতে আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, ঢাকা এবং আগরতলাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে আমরা গাড়ি চালাই। কিন্তু এখন আমাদের সব রুটে সার্ভিস বন্ধ।
গ্রিনলাইন পরিবহনের কর্মকর্তা জানান, আমাদের সব বাস বন্ধ। তবে রাতে একটি বাস ছাড়ার চেষ্টা করছি। জানি না সেটি ঢাকায় পৌঁছাতে পারবে কিনা।
একজন পরিবহন মালিক গত রাতে আজাদীকে জানান, আমরা আন্দোলনের পক্ষে–বিপক্ষে নই। নিরাপত্তার স্বার্থে বাস চালানো বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমাদের একেকটি বাসের দাম এক থেকে পাঁচ কোটি টাকা। একটি পুড়ে দিলে পথে বসতে হবে। তাই কোনো রিস্ক নিতে পারছি না।
পুলিশের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গত রাতে আজাদীকে বলেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই পরিবহন মালিকেরা বাস ছাড়ছেন না। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি। তারা বলেছেন, রাস্তার পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাস ছাড়বেন।