চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি পাইপ লাইন প্রকল্পে ‘আলো’

বন্দরে আসছে পাইপ, ২৭৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পে বিল পরিশোধ ১৬৮৮ কোটি টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিববহন’ প্রকল্প। নানা জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে ঝিমিয়ে থাকলেও অবশেষে ভৌত কাজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্পের পাইপলাইনের পাইপগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসা শুরু হয়েছে। তবে ভৌত কাজ শুরু হওয়ার আগেই ঠিকাদারি সংস্থাকে ২৭৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পের ১৬৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিপিসি।
তথ্য মতে, গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের ৪৩.০৬ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি হলেও আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬১.১৮ শতাংশ। মূলত উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপদ ও দ্রুত সময়ে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিপিসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জ্বালানি তেল সরবরাহে ট্রানজিট লসসহ বিপিসির কোটি কোটি টাকা আর্থিক সাশ্রয় হবে।
জানা যায়, বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নৌপথে পরিবহন করা হয়। এ খাতে ট্রানজিট লসসহ কোটি কোটি টাকার সিস্টেম লস হয় বিপিসির। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে অয়েল ট্যাংকার ঢাকায় পৌঁছতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন নির্মাণ করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পে ২০১৫ সালের জুন মাসে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে বিপিসি। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (ইআইএল) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়। সর্বশেষ প্রকল্পটি পদ্মা অয়েল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। নির্মিতব্য পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২৪৯.৫৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ৭টি স্টেশনসহ ২৪১.২৮ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত দুটি স্টেশনসহ ৮.২৯ কিলোমিটার ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এইচডিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে ২২টি নদীর তলদেশে ৮.৯৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ১৯ উপজেলায় প্রকল্পের ২৮৪.৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যে কুমিল্লার বরুড়ায় নতুন একটি ডিপো স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বেসরকারি খাতের ৩০ হাজার ট্যাংকলরি ও রেলওয়ের শতাধিক ওয়াগন দিয়ে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। নদীপথেও বিপুল সংখ্যক অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। ২০১৩-২০১৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা ও হরতাল-অবরোধে জ্বালানি তেল পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এতে করে পুরো দেশে জ্বালানি সরবরাহে সংকটে পড়ে বিপিসি। এভাবে তেল পরিবহন করা অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন করা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাইপলাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বিপিসি। পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন তেলের গুণাগুণও অক্ষুণ্ন থাকে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পাঠানো ডিপিপিতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারিত ছিল ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। পরবর্তীতে কয়েক দফা সংশোধনের পর ৫৩০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। ওই বছরের ৫ নভেম্বর প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পটি অনুমোদনের পরপরই বহুমাত্রিক জটিলতা তৈরি হয়। বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত করতে উঠে পড়ে লাগে। যে কারণে নতুন করে ডিপিপিটি সংশোধন করে বিপিসি। সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিডিতে প্রকল্পের মাঝপথে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ২৩ কিলোমিটার ৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভূগর্ভস্থ জ্বালানি পাইপলাইন নির্মাণ কাজটি বাদ দেয় বিপিসি। এতে খরচও কমে ৩.০২ শতাংশ। এর ফলে সংশোধিত ডিপিপির আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৫৮ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা। ২০২০ সালের ১৯ মে সংশোধিত ডিপিপির প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। প্রকল্পের এই পর্যন্ত ১ হাজার ৬৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম জ্বালানি সরবরাহ পাইপলাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক আজাদীকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পটির কাজ এখনো পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে চীন থেকে প্রকল্পের কিছু পাইপ চট্টগ্রাম বন্দরে চলে এসেছে। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছি। এইচডিডি কাজের জন্যেও চার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমৃত্যুহীন দিনে চট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত ৩২
পরবর্তী নিবন্ধমাদকাসক্ত ছেলের মারধরে আহত চবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার