কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেলকে ‘শ্বেতহস্তী প্রকল্প’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, টানেল নির্মাণ করা হলেও এখন তার রক্ষণাবেক্ষণ খরচও উঠছে না। তিনি গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রামের সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর জাতীয় নির্বাচন করাকে একমাত্র লক্ষ্য উল্লেখ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জনসংখ্যায় বড় হয়েছে– সুযোগ সুবিধায় বড় হয়নি। সমস্যা রয়েই গেছে। এ নগরকে আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা যেত। তবে তা করা হয়নি। অনেক সমস্যা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় রয়ে গেছে।
সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) শারমিন জাহান। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নির্বাচন প্রসঙ্গ : ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর জাতীয় নির্বাচন করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং দেশে–বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আমরা করছি। তাই কোনো মেগা প্রকল্প হাতে নিতে পারছি না। অল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পসমূহ আমরা অনুমোদন দিচ্ছি। এছাড়া দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আমরা অন্তত শুরু করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমাদের আসল কাজ একটা ভালো নির্বাচন দেওয়া। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখা। এখন যেগুলো করছেন, সেগুলো হচ্ছে বাই প্রোডাক্ট। মন্ত্রণালয়ের যেসব সংস্কার করছেন, তা সময়–সুযোগ পাওয়ায় করতে পারছেন। তবে আসল কাজ হলো এখন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার শুরু করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে হলে এটা করতে হবে। তবে অনেক রাজনৈতিক প্রভাবশালী আছেন, ক্যাডার আছেন, তারা অস্ত্র জমা দেবেন না স্বাভাবিক। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। নির্বাচনকালীন বৈধ অস্ত্র জমা নিয়ে রাখতে হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা কিছুদিন মাত্র আছি। এরপর চলে যাব। তবে কিছু ট্রেন্ড শুরু করেছেন। সুশাসন একদিনে হয় না। তবে আমরা একদম আগের জায়গায় ফিরে যাব না। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
টানেলসহ উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গ : টানেলকে শোপিস আখ্যায়িত করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এই শোপিস তো বেশিদিন দেখতে আসবে না মানুষ। টানেল দেখার জিনিস না।
এসময় সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহেদ হোসেন বলেন, টানেলের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ কম। তিনি এখন গাড়ি চলাচলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য একটি বিকল্প সড়ক প্রশস্ত করার প্রস্তাব দেন।
এরপর উপদেষ্টা বলেন, টানেল করার পর কেন চিন্তা করছেন? আগে তো পরিকল্পনা করা দরকার ছিল। এটি এখন শ্বেতহস্তী প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। টানেল চালু রাখতে প্রতিদিন লোকসান দিতে হচ্ছে। আবার আনোয়ারা প্রান্তে পাঁচ তারকা–সাত তারকা রিসোর্ট করা হয়েছে। বিরাট টাকা খরচ হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। তাতেও অনেক টাকা দরকার। আর এমন জনশূন্য জায়গায় কে বিনোদন করতে আসবে। এটা নিয়ে ভাবতে হবে। এসব রিসোর্ট বেসরকারি খাতে দেওয়ার চিন্তা আছে জানিয়ে বলেন, এগুলো দিয়ে দিতে হবে। যদিও কেউ নিতে রাজি হচ্ছে না। দিয়ে দিতে হবে। আয় না হলেও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। দেখাশোনা করবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বহদ্দারহাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নিচের অংশ সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়নি। এ অংশে বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সমুন্নত ও সৌন্দর্য বর্ধন করতে হবে। গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বন বিভাগের সাথে সমন্বয় করতে হবে।
পরে তিনি সেবা সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের নিকট তাদের প্রকল্পসমূহের বর্তমান অবস্থা, অর্থ ব্যয় ও সমস্যাদি জানতে চান। পাশাপাশি যেসব নতুন প্রকল্প কয়েক মাসের মধ্যে শুরু করা যাবে সেগুলো সম্পর্কে সভায় তুলে ধরা ও মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণের নির্দেশনা দেন। উপদেষ্টা বলেন, কোনো প্রকল্প দীর্ঘকাল ধরে চলমান রাখার অর্থ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে জনভোগান্তি চালু রাখা। এ ধারা পরিহার করতে হবে।
যা বললেন মেয়র : সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি নগরের সেবা সংস্থাগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত সমন্বয় করছি। তাদের এক ছাতার নিচে এনে নগরবাসীর সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। ফলে গত কোরবানিতে কোথাও বর্জ্য অব্যবস্থাপনা বা অপরিষ্কার দেখা যায়নি।
মেয়র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ‘আধুনিক যান–যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’ প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প ব্যয় কাটছাঁট করা হয়েছে। তাছাড়া অনুমোদিত অর্থের ৬০ ভাগ ঋণ হিসাবে নিতে বলছে। এটা হতে পারে না। কর্পোরেশন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারি তহবিল হতে টাকা দিলে নগরবাসীর উপকার হবে। তাছাড়া কর্পোরেশনের পূর্ব থেকেই অনেক ঋণ রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। মেয়র সিটি গভর্মেন্ট বা নগর সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উপরও জোর দেন।