চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

মনোনয়ন ফরম জমাদানের সময় বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেয়ার শর্ত, ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রার্থীরা যেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারেন সেজন্য কৌশলে অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে চেম্বারের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের সময়সূচি প্রকাশ করেছে চেম্বারের নির্বাচন কমিশন। এতে বলা হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শুরু হবে। ২০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা যাবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

মনোনয়ন ফরম জমাদানের সময় প্রার্থীদের বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, নোটারি পাবলিক কর্তৃক সত্যায়নের মাধ্যমে ঋণখেলাপি কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত মূল প্রত্যয়নপত্র, নোটারি পাবলিক কর্তৃক সত্যায়নের মাধ্যমে কর, ভ্যাট, শুল্ক হালনাগাদ পরিশোধ করেছেন কিনা সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত আয়কর, ভ্যাট রিটার্ন ও শুল্ক পরিশোধের মূল সনদপত্র, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত কিনা এবং মুক্তি লাভের পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের মূল সনদ, চেম্বার প্রদত্ত মেম্বারশিপ সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি (১ জুলাই ২০২৫ থেকে ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫এর মধ্যে ইস্যুকৃত), নির্বাচনী বোর্ড প্রণীত আচরণবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করবেন মর্মে প্রার্থীকে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ঘোষণা প্রদান করতে হবে, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য অর্থ প্রদানের মূল রশিদ এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।

চেম্বারের নির্বাচনী বোর্ডের এই নোটিশ প্রকাশের পর ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চট্টগ্রাম চেম্বারের সদস্য একাধিক ব্যবসায়ী নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ধরনের কাজগপত্র জমাদানের নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে মূলত প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তারা বলেন, একজন ব্যবসায়ীর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিআইবি রিপোর্ট নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহ করতে হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে এই রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হলে সময় লাগে। এছাড়া কোনো ব্যবসায়ী ব্যক্তিগতভাবে ইনকাম ট্যাঙ, ভ্যাট কিংবা শুল্ক পরিশোধের সার্টিফিকেট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। ইনকাম ট্যাঙ এবং ভ্যাটের লোকাল অফিস থেকে টিন সার্টিফিকেট এবং হালনাগাদ ট্যাঙ পরিশোধের সনদ প্রদান করা হয়। ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত কিনা সেটাও পুলিশ থেকে নিতে গেলে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থানা বা সিএমপি থেকে সাথে সাথে নেয়ার সুযোগ নেই। এটি ঢাকা থেকে ঘুরে আসার পরই কেবল সিএমপির বিশেষ শাখা থেকে সরবরাহ করা হয়। ব্যাংকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে আবেদন থেকে শুরু করে ক্লিয়ারেন্স সনদ পেতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগে। অথচ মাত্র ৭ দিন সময় দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, নিজেদের পছন্দের বাইরের যাতে কেউ প্রার্থী হতে না পারে সেজন্য কৌশলে এসব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। অথচ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর প্রার্থীদের এনআইডি এবং টিন নম্বর দিয়ে চেম্বারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আনানোর সুযোগ রয়েছে। মনোনয়নপত্রের সাথে চেম্বার একটি হলফনামা নিতে পারে। যেখানে মিথ্যা ঘোষণা প্রমাণ হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা চেম্বার সংরক্ষণ করবে।

চেম্বারের সদস্য এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোহাম্মদ শওকত আলী আজাদীকে বলেন, এই ধরনের শর্তারোপ প্রার্থিতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। এগুলো সুষ্ঠু, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে অন্তরায়।

চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হক বলেন, এসব কাগজপত্র স্বল্প সময়ে যোগাড় করে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শুধু কঠিন নয়, খুবই কঠিন। অনেকের পক্ষে এসব কাগজপত্র যোগাড় করা সম্ভব হবে না।

নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাযথ কাগজপত্র দাখিল না করলে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ফ্যাসিবাদী পরিবারতন্ত্র পুনর্বহালের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জোনের সেক্রেটারি শাহজাহান মহিউদ্দিন এক যুক্ত বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, দেশের অন্যতম প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতীতে চেম্বারকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংগঠন হিসেবে ব্যবহারকারীদের সাথে যোগসাজসে একটি চক্র আবারও প্রতিষ্ঠানটিকে বিগত দিনের ন্যায় দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজকে সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানান তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকীভূত করতে ৫ ইসলামি ব্যাংকে বসবে প্রশাসক : বাংলাদেশ ব্যাংক
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ৫১ জনসহ ৫৫৫ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে বদলি করল এনবিআর