জোড়াতালি দিয়ে চলছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের (ল্যাব) কার্যক্রম। প্রতি অর্থবছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানটিতে নেই পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক ল্যাব। আমদানি–রপ্তানি বাড়লেও ল্যাবে পণ্য পরীক্ষার সক্ষমতা ১ শতাংশও বাড়েনি। অবাক করার মতো বিষয় হলো– গত প্রায় তিন বছর ধরে একজন সহকারী কেমিক্যাল এসিসট্যান্ট দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
আমদানি–রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কারো নজর নেই। বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা বাইরের ল্যাবের ওপর নির্ভরশীল। পূর্ণাঙ্গ ল্যাব ও দক্ষ জনবল থাকলে কাজের গতি বৃদ্ধি পেতো। তাই এখন রাসায়নিক পরীক্ষকের অভাবে যে পরীক্ষা একদিনের হওয়ার কথা, সেটি এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগছে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি সময়ও লাগছে। আবার অনেক সময় নমুনা পরীক্ষায় জটের কারণে বন্দর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। এতে আমদানিকারকদের পোর্ট ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে।
রাসায়নিক ল্যাবের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন পণ্যের শতাধিক নমুনা আসে। এই বিশাল পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক নমুনার পরীক্ষা আবার দ্রুত করে দিতে হয়। বর্তমানে যে অবস্থা এতে অন্তত ১০ জন রাসায়নিক পরীক্ষক দরকার। কারণ পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়, আমদানিকারক ঘোষণা অনুযায়ী সঠিক পণ্য আমদানি করেছেন কিনা। অনেক সময় কিছু অসাধু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কের পণ্য নিয়ে আসে। তাই পণ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য রাসায়নিক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাব কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। এখানে একজন পূর্ণাঙ্গ রাসায়িনক পরীক্ষকও নাই। সর্বশেষ যিনি পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষক ছিলেন; তিনি অবসর নিয়েছেন গত ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওনি যাওয়ার পর থেকে একজন সহকারী কেমিক্যাল এসিসট্যান্টকে ওনার পদে দেওয়া হয়। তিনি আবার অনেক পরীক্ষা করতে সক্ষম না। আবার অনেক পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নাই। ফলে বেশিরভাগ পণ্যের পরীক্ষা ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বহির্ল্যাবে পাঠাতে হচ্ছে। এতে পরীক্ষার জন্য আমদানিকারকদের এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আবেদন জানাবো, যেন চট্টগ্রামের কাস্টমসের এই ল্যাবটি আধুনিকায়ন করে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের বর্তমান পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নতুন ভবনের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেখানে পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক ল্যাব থাকবে। তখন দক্ষ জনবল নিয়োগ ও উন্নত যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হবে।