সম্প্রতি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ছাত্রদলের ৫ কর্মীকে মারধরের ঘটনার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম কলেজ। চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে তারা। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি নিরপেক্ষ, নিরাপদ এবং রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য সংগ্রাম করে আসছি। জুলাই বিপ্লবের মূল হাতিয়ার নয় দফার অন্যতম দাবি ছিল ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে গৃহীত নীতির অধীনে আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছি। শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম আমাদের অধিকার ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে, যা আমরা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে চিকা মারার ঘটনা ঘটে, যা ক্যাম্পাসে রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন। যা আমরা মুছে দিয়ে বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকার ব্যবস্থা করেছি। এরপর থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নামে–বেনামে সক্রিয় কার্যক্রম চালাতে চেষ্টা করে যা আমাদের জন্য খুবই আশংকার বিষয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় একটি ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন নেতা অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের সঙ্গে সমস্যার কথা আমরা শুনেছি। এভাবে বারবার ছাত্ররাজনীতি চালু করার চেষ্টা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার। ছাত্রদের অধিকার সংরক্ষণে ছাত্রসংসদভিত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দলীয় রাজনীতির অপব্যবহার ও সহিংসতা আমাদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রসংসদ হবে একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দলীয় রাজনীতির প্রভাব ছাড়াই শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার ও সমস্যার সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো, চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা। কোটা আন্দোলনে নিহত শহীদ ওয়াসিমের নামে কলেজের কোনো বিশেষ স্থাপনার নামকরণ এবং তার পরিবারের পুনর্বাসনে কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা রাখা। দ্রুত শিক্ষার্থীদের হল সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা। পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং জুলাই বিপ্লবে নির্যাতনকারী হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। জুলাই বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্ত, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার কলেজ প্রশাসন কর্তৃক বহন করা।