চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ

ভারতীয় ভিসা প্রদান সীমিত থাকায় যাত্রী সংকট যাত্রীরা বললেন, ভাড়াও বেশি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

দেশের গুরুত্বপূর্ণ এয়ার রুট চট্টগ্রামকলকাতা ফ্লাইট চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, ভারতীয় ভিসা সেন্টার ভিসা প্রদান সীমিত করায় যাত্রী সংকটে এই রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাদের ভিসা আছে তাদের অনেকে এখন কলকাতা যেতে ভয় পাচ্ছেন। বিমানবন্দরে আটকসহ নানা ধরনের ঝামেলায় পড়ার ভয়ে কেউ আর কলকাতামুখো হচ্ছেন না। যাত্রী সংকটের কারণে এই রুটে বিমান চলাচল সম্ভব হচ্ছে না বলে এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অপরদিকে যাত্রীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভাড়া বেশি বলে যাত্রী সংখ্যা কম হয়। চট্টগ্রামের সাথে কলকাতার রুটটি শিক্ষা, চিকিৎসা, পর্যটন এবং ব্যবসাবাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মন্তব্য করে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিমানের সপ্তাহে অন্তত দুটি ফ্লাইট চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রামকলকাতা রুট দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামসহ সন্নিহিত অঞ্চলে অন্তত দুই কোটি মানুষের বসবাস। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে যারা বিমানে চলাচল করেন তারা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে যাতায়াত করেন। অপরদিকে চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে ভারতের প্রবেশদ্বার কলকাতা। এ অঞ্চলের কিছু মানুষ গত দুচার বছর ধরে আখাউড়া সীমান্ত ব্যবহার করলেও সিংহভাগ মানুষ ব্যবহার করেন কলকাতা বিমানবন্দর। ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ পর্যটক হিসেবে ভারতে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে আজমীর শরিফে হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (.) এর মাজার শরীফ জেয়ারত করতে যান বিপুল সংখ্যক মানুষ।

চট্টগ্রামকলকাতা রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয় বহু বছর আগে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার আগে থেকেই কলকাতার সাথে ফ্লাইট চলাচল ছিল। বাংলাদেশ বিমান চট্টগ্রামকলকাতা রুটে প্রথম ফ্লাইট চলাচল শুরু করে সত্তরের দশকে। পরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ এবং বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবসায় আসার পর এই রুটে গতি আসে। দেশের বেসরকারি অনেকগুলো এয়ারলাইন্স এই রুটে ফ্লাইট অপারেট করতে শুরু করে। বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি জিএমজি এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ার, নভোএয়ার, ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্স এবং ভারতীয় এয়ারলাইন্স স্পাইসজেট এই রুটে ফ্লাইট অপারেট করত। কিন্তু এই রুটে একে একে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জিএমজি, ইউনাইটেড এবং রিজেন্ট এয়ার ব্যবসা বন্ধ করার ফলে এই রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে। বাংলাদেশ বিমান ২০১৯ সালের দিকে চট্টগ্রামকলকাতা রুটে ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় নভোএয়ারের ফ্লাইট চলাচলও। ভারতীয় স্পাইসজেট একসময় এই রুটে ব্যবসা করলেও এক পর্যায়ে তারাও ফ্লাইট অপারেট বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত গত বছর দুয়েক ধরে শুধুমাত্র ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্স এই রুটে ফ্লাইট অপারেশন টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে তারাও ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে ছয়দিন কলকাতায় একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল ইউএসবাংলা। সম্প্রতি যাত্রী না থাকায় চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অপারেশন খরচ হচ্ছে। স্টাফ রয়ে গেছে, এয়ারপোর্টে সবকিছু রয়েছে। শুধু ফ্লাইট নেই। ভিসা না থাকায় কেউ যেতে পারছেন না। তাই আমরা আপাতত ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করেছি। ভিসা সেন্টার চালু হলে এই রুটে আবার ইউএসবাংলা ডানা মেলবে।

ইউএসবাংলার অপর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো না। মাত্র ১২ জন যাত্রী নিয়েও ফ্লাইট চালিয়েছিলাম। এখন সেই অবস্থাও নেই। ভারতীয় ভিসা সেন্টার পুরোদমে কাজ শুরু না করা পর্যন্ত এই রুট নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ নেই।

ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলো থেকে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র চিকিৎসা এবং শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া হচ্ছে। তাও সীমিত সংখ্যক। চিকিৎসা ভিসার ক্ষেত্রেও রোগের ধরন বিবেচনা করা হচ্ছে। ভিসা না পাওয়ায় ভারতে যাওয়া লোকের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে এয়ারলাইন্সে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে যাত্রীদের অনেকে বলছেন, চট্টগ্রামকলকাতা রুটে একসময় ভাড়া সহনীয় থাকলেও পরে এয়ারলাইন্সগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। চট্টগ্রামকলকাতা রুট উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি ভাড়ার রুট হয়ে ওঠে। এই রুটে নিয়মিত চলাচলকারী মোহাম্মদ সালমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, শুধুমাত্র বাড়তি ভাড়ার কারণে অনেক মানুষ বিমানের পরিবর্তে বাসে কিংবা চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে আখাউড়া গিয়ে ওখান থেকে কলকাতার ফ্লাইট ধরেন। যাত্রীদের এই পরিবর্তনও চট্টগ্রামকলকাতা রুটে যাত্রী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

ভারতীয় ভিসা সেন্টার চালু করা প্রসঙ্গে ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে বর্ণিত তথ্যমতে, কিছু জরুরি ক্যাটাগরি ছাড়া বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা প্রদান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় জরুরি মেডিকেল ভিসা এবং ভারতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভিসা ব্যতীত অন্য ক্যাটাগরির কোনো ভিসা ইস্যু করছে না ভারতীয় ভিসা সেন্টার। কবে নাগাদ ভিসা সেন্টার পুরোদমে চালু হবে বিষয়টি নিয়েও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের সরকারই ভিসা প্রদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। অন্য কারো পক্ষে তা বলা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ভারতের ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লিসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাজারে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ গ্রেপ্তার