চকরিয়ায় পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীসহ বিভিন্ন ছড়াখালে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢলের পানি ও অতি ভারী বর্ষণে সৃষ্ট পর পর দুই বন্যায় কৃষি, যোগাযোগ ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও মানুষের বসতবাড়ি, গ্রামীণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশ। সবমিলিয়ে পর পর দুই বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে বিনিয়োগকৃত পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে প্রান্তিক কৃষক ও মৎস্য চাষি। অপরদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলজিইডির সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রামীণ অবকাঠামোর। এতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দপ্তরকেন্দ্রীক পর পর দুই বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরূপণ করা হয়। যা স্ব স্ব দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রেরিত সেই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র থেকে এই তথ্য মিলেছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উন্নয়ন কর্মকর্তা রাজীব দে জানিয়েছেন, চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষের দিকে ও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সংঘটিত পৃথক বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফসলের। তদ্মধ্যে ৩৬৫ হেক্টর জমিতে রোপিত ধান ক্ষেত, শীতকালীন সবজির বীজতলা ও রকমারি সবজির ক্ষেত বন্যায় তলিয়ে গিয়ে কৃষকের ক্ষতি হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানিয়েছেন, পর পর দুই বন্যায় উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কৃষি খাতে ক্ষতির চিত্র বেশ। আমন, আমনের বীজতলা, শীতকালীন শাক–সবজি ক্ষেতের মধ্যে পঁচে গেছে বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায়। এতে সবজির বাজারে বেশ প্রভাবও পড়েছে।
সফল খামারি কাকারা ইউনিয়নের আদনান হায়দার রামীম বলেন, বর্ষা মৌসুমে একমাসের ব্যবধানে পর পর দুই বার বন্যা হয়েছে। এতে আমন ধান ক্ষেতসহ শীতকালীন সবজি ও বীজতলা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই বার ক্ষতির পর প্রান্তিক কৃষক কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে সেই পন্থায়ই খুঁজছেন। পর পর দুই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মাথা তুলে যাতে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে– এই কথা জানিয়ে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, পর পর দুই বন্যায় কৃষি বিভাগের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি যাতে কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চকরিয়ার প্রধান সহকারী উত্তম কুমার নন্দী জানিয়েছেন, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে এলজিইডির আওতাধীন ৪২১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। বন্যার সময় ৫৪ সড়কের ১৪ হাজার ৫৩০ মিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পর পর দুই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর তথ্য মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ মিললেই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতে কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে উপকূলীয় ৭টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি প্রবেশ করে উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে ২৭০ পুকুর–দিঘি, ১৩০টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭০ টন মাছ ও ২৫ টন চিংড়ি ভেসে যাওয়ায় অবকাঠামোসহ ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর আগে প্রথমবারের বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল দ্বিগুণ। ওই সময় ৪টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৪৫ হেক্টর জমিতে ৩৭০টি পুকুর–দিঘি ও খামার পানিতে ডুবে যায়। এতে ১১২ টন মাছ ভেসে যায়। পুকুর, দিঘি ও মাছের খামারে বন্যার পানি প্রবেশ করে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারহান তাজিম বলেন, পর পর দুই বন্যায় মৎস্য চাষিদের ক্ষতির চিত্র ছিল বেশ। এতে মৎস্য চাষিরা আর্থিকভাবে বেশ মার খেয়েছেন। দুই বন্যায় মৎস্য বিভাগেরই ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা।