কক্সবাজারের চকরিয়ায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক হিসেবে পিডিবির গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার। এসব গ্রাহকের জন্য প্রতিদিনের বিদ্যুৎ চাহিদা হচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট। কিন্তু ৫০ শতাংশও বিদ্যুতের সরবরাহ না পাওয়ায় প্রচণ্ড গরমে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন মানুষ।
এদিকে রমজানের শেষ দিকে এসে বেশ জমজমাট হয়ে ওঠেছে চকরিয়া পৌরশহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গার অন্তত ৩০টি বিপনীবিতান। এসব বিপনীবিতানে ঈদের বেচাকেনায় দিন–রাত সমানে ভিড় করছেন লাখো মানুষ। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় এসব বিপনীবিতানের ভেতর প্রচণ্ড গরমে মানুষের হাসফাঁস হওয়ার মতো অবস্থা দেখা দিয়েছে। অনেক বিপনীবিতানে নিজস্ব বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও সিংহভাগ বিপনীবিতান সম্পূর্ণ নির্ভর হচ্ছে পিডিবির বিদ্যুতে। চকরিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রেজাউল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, রমজানের শেষদিকে এসে বিদ্যুতের এমন ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপনীবিতানগুলোর অবস্থা শোচনীয়। এসব বিপনীবিতানে সওদা করতে আগত সব বয়সের ক্রেতারা প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়ছেন। বিদ্যুৎ একবার আসলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই চলে যাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও বিদ্যুতের দেখা মিলছে না। এই অবস্থায় চরম দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছেন ক্রেতা–বিক্রেতা থেকে শুরু করে সবাই।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ চকরিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, পিডিবি চকরিয়া কার্যালয়ের অধীনস্থ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাতটি ফিডারে ভাগ করা হয়েছে। তদ্মধ্যে সরবরাহ পাওয়া বিদ্যুতে দু–তিনটি ফিডার চালু রেখে বাকি ফিডারের গ্রাহকদের লোডশেডিং করা হয়। পর্যায়ক্রমে ফিডার বদল করে সবাইকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, পিডিবি চকরিয়া কার্যালয়ের অধীনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার। এসব গ্রাহকের বিপরীতে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৫ মেগাওয়াট। কিন্তু দোহাজারী ও কঙবাজার গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৮ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ দেওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছেন। যোগ করেন তিনি।
অপরদিকে কঙবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন কঙবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া ও বান্দরবানের লামা উপজেলার দুটি ইউনিয়নসহ ২৭টি ইউনিয়নের গ্রাহক সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৫৪ হাজার। এসব গ্রাহকের বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৯ মেগাওয়াট। কিন্তু এই পরিমাণ চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। এই বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে ভয়াবহ লোডশেডিং করা হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের ২৭টি ইউনিয়নেও। এতে এসব মানুষ বর্তমানে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিং যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন।
কঙবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি ও চকরিয়া–পেকুয়ার পরিচালক হায়দার আলী বলেন, ভয়াবহ লোডশেডিং অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় রোজা রেখে মানুষ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অসহনীয় যন্ত্রণায় সময় পার করছেন। গ্রাহকদের নেতা হায়দার আলী বলেন, চকরিয়া, পেকুয়া ও লামার দুই ইউনিয়নের সর্বমোট ১ লাখ ৫৪ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৮ মেগাওয়াট। কিন্তু গত পাঁচদিন ধরে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। তাই বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আশা করছি, দু–একদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।