ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে জলোচ্ছ্বাসে, ঘর ভেঙে এবং দেয়াল ধসে ছয় জেলায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতরোববার দুপুর থেকে গতকাল সোমবার দুপুরের মধ্যে পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামে এসব মৃত্যু ঘটে। মএর মধ্যে পটুয়াখালীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের মধ্যে ভেসে গিয়ে একজন এবং গাছ পড়ে দুইজন মারা গেছেন। সাতক্ষীরাতেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশালে ভবনের দেয়াল ধসে দুইজন, গাছচাপায় একজন মারা গেছেন। ভোলায় ঝড়ে ঘর ও গাছচাপা পড়ে প্রাণ গেছে তিনজনের। খুলনায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক পথচারী মারা গেছেন।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানান, ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে অতিদ্রুত তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাতে খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি এলাকা উপকূল অতিক্রম শুরু করে। পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে এ ঝড় স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ঝড় দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সংকেতও নামানো হয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাপিবদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে বিতরণ লাইন লণ্ডভণ্ড হওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের দুই কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক। এর মধ্যে কেবল পল্লী বিদ্যুতেরই ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন গ্রাহক আছেন বলে গতকাল সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের বার্তায় জানানো হয়েছে। ঝড় চলাকালে আক্রান্ত এলাকায় রোববার রাতভর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছিল বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তবে ঝড়–বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসার পর এসব এলাকার কিছু কিছু সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের শুরুতে সাগরে ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) এলএনজি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হলেও সেখানকার পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক হতে চলেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থাপনাগুলোর কোনো ধরনের ক্ষতি সাধিত হয়নি।
উপকূলের জেলাগুলোতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন সেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে; একই কারণে ইন্টারনেট সেবাও কাজ করছে না। টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, বিদ্যুৎ না থাকায় ৬৪ জেলার ২২ হাজার মোবাইল সাইট (টাওয়ার) অচল হয়ে পড়েছে, যা মোট সাইটের ৪৮ শতাংশের বেশি।
ঝুঁকিতে পড়া ৩২ লাখ শিশুর পাশে থাকবে ইউনিসেফ
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়া ৩২ লাখ শিশুর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিলবিষয়ক সংস্থা–ইউনিসেফ। সোমবার এ সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, রেমালের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে শিশুসহ ৮৪ লাখের বেশি মানুষ ঝুঁকিতে পড়েছে।
সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, ‘এ সংকটময় মুহূর্তে আমাদের একমাত্র প্রচেষ্টা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও তাদের পরিবারের কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার অনেক উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিসেফ শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক সতর্কতামূলক প্রচার ও প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে।