‘ঘুষ না দেয়ায়’ আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা ইউএনও’কে অভিযোগ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১২ জুলাই, ২০২৪ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী অর্পন বড়ুয়া নামে ওই শিক্ষক। তিনি উপজেলার কোদালা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক। ভুক্তভোগী শিক্ষক অর্পন বড়ুয়ার দায়ের করা অভিযোগে জানা গেছে, ওই শিক্ষক সম্প্রতি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের

অধীনে বিএড শেষ করার পর চাকরিবিধি অনুযায়ী বিএড স্কেল পাওয়ার জন্য আবেদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনলাইনে দেন। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অনলাইনের ফাইল ফরোয়ার্ড করার জন্য হাসিনা জামাল কলেজের লাইব্রেরিয়ান মো. কামরুলের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ফাইল ব্যাক করে দেন। পুনরায় দ্বিতীয়বার ফাইল পাঠালে শিক্ষক অর্পন ৪ হাজার টাকা কামরুলের জনতা ব্যাংকের হিসাবে পাঠান। কিন্তু ৪ হাজার টাকায় হবে না বলে তিনি আবার টাকাগুলো ফেরত দেন। এরপর শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে ওই শিক্ষক অনুরোধ করলে ফাইল ফরোয়ার্ড করে দেবেন বলেন। কিন্তু এরপরও কাজ না হওয়ায় তিনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে দেখা করে বিষয়টি জানালে ফাইল আবার দেয়ার পরও ফিরিয়ে দেন।

এদিকে গত ৬ জুলাই দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন অজুহাতে ঘুষ নেয়ার উদ্বেগ জানিয়ে শিলক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর, তাদের কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ভুক্তভোগী শিক্ষক অর্পন বড়ুয়া বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তা মহোদয় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষককর্মচারী নিয়োগ ও স্কেল পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ফাইলে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে আসছেন। আমার কাছ থেকেও কামরুলের মাধ্যমে তিনি ঘুষ দাবি করেন। তার সব ফোন রেকর্ড এবং হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট আমার কাছে রয়েছে। অভিযোগের পর সমঝোতা করার জন্যও তিনি চেষ্টা চালিয়েছেন। আমি একজন ভুক্তভোগী হিসেবে রাঙ্গুনিয়ার সমস্ত ভুক্তভোগী শিক্ষকের পক্ষ হয়ে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করছি।’ লাইব্রেরিয়ান কামরুলের মাধ্যমে ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. কামরুল বলেন, ‘টাকা আমার অ্যাকাউন্টে পাঠালেও কাজ না হওয়ায় আমি ব্যাক করে দিয়েছি।’ ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘অর্পন বড়ুয়া স্কেলটি পাবেন না। তাই হয়নি। তিনি আবেদন ফাইল আবারও পাঠাতে পারেন।’ এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত আজিজুর রহমান কিরণ এর আগে সাতক্ষীরার কারীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, ঘুষ নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধল্যাব সহকারীর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতাল থেকে ৫ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক কর্মী আটক