যুক্তরাজ্যের ভোটের লড়াইয়ে যে ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ছিলেন, তাদের মধ্যে চারজনের মুখে জয়ের হাসি ফুটেছে। তারা চারজনই সবশেষ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন, চারজনই লেবার পার্টির। আগের বার বিরোধী দলে থাকা এই চার এমপি এবার বসবেন সরকারি দলের আসনে। কেউ কেউ মন্ত্রিত্বও পেতে পারেন।
২০১৯ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ছিলেন ১৪ জন। তার মানে এবার রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি প্রার্থী থাকলেও নতুন কেউ জয় পাননি। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে ছোট–বড় মোট ৯৫টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দেয়। দেশটির ইতিহাসে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে এবারই সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী ভোট করেন। খবর বিডিনিউজের।
রুশনারা আলী: টানা পঞ্চমবারের মত লেবার পার্টি থেকে এমপি হয়েছেন সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলী। সিলেটের মেয়ে রুশনারা প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ২০১০ সালে, লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ের মাধ্যমে। এবার তার নির্বাচনি আসনের এলাকা কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। এর আগে তার নির্বাচনি এলাকা ছিল বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো, এবার সেটি বদলে করা হয়েছে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি। রুশনারা পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক বাংলাদেশি আজমল মাসরুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট। সুমন আহমেদ ও স্যাম উদ্দিন নামের আরও দুই বাংলাদেশি সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্র্যাট থেকে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাবিনা খান।
টিউলিপ সিদ্দিক: উত্তর–পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনে টানা চতুর্থবারের মত বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামসকে প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি।
রূপা হক: টানা চতুর্থবারের মত লেবার পার্টি থেকে পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছেন পৈত্রিক সূত্রে পাবনার মেয়ে রূপা হক, যার জন্ম ১৯৭২ সালে লন্ডনের ইলিংয়ে। ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে জয়ী রূপা লেবার পার্টির সদস্য হন ১৯৯১ সালে। তিনি একাধারে লেখক, মিউজিক ডিজে, কলামিস্ট হিসেবে পরিচিত। এর আগে ২০০৫ সালের নির্বাচনে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি তিনি। ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি।
আফসানা বেগম: লেবার পার্টির মনোনয়নে এবারও জয় পেয়েছেন আফসানা বেগম। ২০১৯ সালে পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সোচ্চার ভূমিকা পালন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এমপি আফসানা বেগম। আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। বাংলাদেশে তার আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। তিনি এবার পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট (৪৩.১ শতাংশ)। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করা এহতেশামুল হক পেয়েছে ৪ হাজার ৫৫৪ ভোট।