দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বাসিন্দা চার লাখ। চিকিৎসা, আদালত ও জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমসহ অধিকাংশ সরকারি–বেসরকারি সেবা নিতে সাগর পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার জেলা সদরে যেতে হয় এসব বাসিন্দাদের। এর মধ্যে গত ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা উত্তোলন এবং এই সংক্রান্ত মামলা–মোকদ্দমার প্রয়োজনে একটি বড় সংখ্যক বাসিন্দাকে প্রায় প্রতিদিন কক্সবাজারে সদরে যেতে হয়। কিন্তু এই যাতায়াতে নৌ ঘাটের যন্ত্রণায় এক সীমাহীন দুঃখ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের।
বোটের জন্য জেটিতে দীর্ঘ অপেক্ষা, বোটে উঠতে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিযোগিতা, রোগী পারাপারে প্রতিবন্ধকতা, নড়বড়ে জেটি, নাব্যতা সংকট, ঘাট কর্তৃপক্ষ ও বোট চালকদের হাতে লাঞ্ছনা, ঝড়–বৃষ্টির ভোগান্তি এবং জেটিতে রিকশা চালকদের দৌরাত্ম্যে মহেশখালীর চার লাখ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৮ সালে এরশাদের সরকারের আমলে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের মহেশখালী ঘাটের জেটি নির্মাণ করা হয়। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ২০০০ সালে ১০০ মিটারের আরেকটি নতুন জেটির সম্প্রসারণ করা। কিন্তু পলি জমে খাল ভরাট হতে থাকায় ভাটার সময় নৌযানে ওঠানামায় চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এরপর আর কোনো স্বস্তিদায়ক ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। তাই প্রায় ২৫ বছর ধরে ভাটায় কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে দুই বা তিনবার পলি ড্রেজিং করা হয়। তাও এক মৌসুম শেষ না হতেই ভরাট হয়ে যায়। এটিই জেটি পারাপারে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের কারণ যাত্রীদের।
সরেজমিন ঘুরে ও ঘাট কর্তৃপক্ষ থেকে জানা গেছে, গত মৌসুমে মহেশখালী জেটিঘাট সংলগ্ন খাল খনন করা হয়েছিল। কিন্তু গত বর্ষায় পলি জমে তা আবার ভরাট হয়ে গেছে। এতে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে তীব্র নাব্যতা সংকট সৃৃষ্টি হয়েছে। তাই ভাটার সময় ঘাটে ভিড়তে পারছে না স্পিডবোটসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান। তাই মূল নদীতেই নেমে ডিঙি নৌকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। বর্তমান শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় পূর্ণ ভাটায় ডিঙি নৌকাও চলছে না; তাই হাঁটু বা তারও বেশি কাদা মাড়িয়ে উঠতে হচ্ছে কূলে। অন্যদিকে নাব্যতা সংকটে ৬ নম্বর ঘাটেও ভিড়তে না পেরে নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে ভিড়ছে নৌযানগুলো। একইভাবে আদিনাথ জেটিও নাব্যতা সংকট ও জরাজীর্ণতায় যাত্রী পারাপারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে রোগী, নারী–শিশু ও বৃদ্ধদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ঘাটের এই সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় সময় নানা আন্দোলন ও প্রতিবাদ হয়। কিন্তু কে শুনে কার কথা। মহেশখালী বিভিন্ন স্তরের লোকজন বিভিন্ন সময় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতসহ নানাভাবে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কখনো কোনো দুর্ভোগ লাঘব হয়নি। এ ব্যাপারে মহেশখালীর বাসিন্দা এস এম রুবেল বলেন, জেটিঘাট ভরাটসহ হেন দুর্ভোগ নেই যে, এই নৌপথে হয় না। আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে বহু আগে। আমরা নানা সময় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ বলেন, ২০২৩ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মহেশখালীতে নতুন করে আরও একটি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মহেশখালীর বর্তমান জেটির পাশে আরেকটি নতুন জেটির নির্মিত হচ্ছে। নতুন জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের নৌপথে যাতায়াতের ভোগান্তি আর থাকবে না। ইতিমধ্যে নতুন জেটির কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও যথাসময়ে শেষ হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান যে নাব্যতা সংকটের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে ভরাট হওয়া জেটিঘাটে খনন কাজ চলছে।