রেফারীর দুর্বল খেলা পরিচালনা এবং ক্লাব কর্মকর্তাদের তুলকালাম কান্ডে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম গতকাল রোববার বিকেলে কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এদিন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ঘটনাবহুল খেলায় মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ জয় পেয়েছে। তারা ২–১ গোলে শতদলকে হারিয়ে শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে গেছে। এ জয়ের সুবাদে তারা ৮ খেলা শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে। তাদের পেছনেই আছে শিরোপার অন্যতম দাবিদার কিষোয়ান স্পোর্টিং ক্লাব। ৭ খেলা শেষে তাদের পয়েন্ট ১৫। উদয়ন সংঘের আর একটি খেলা বাকি আছে। অন্যদিকে কিষোয়ান আরো দুটি খেলায় অংশ নেবে। বিভিন্ন ঘটনায় আক্রান্ত গতকালের ম্যাচটি দেড় ঘটনার জায়গায় শেষ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টায়। খেলার প্রথম ২৮ মিনিট নির্বিঘ্নে খেলা পরিচালনা করেন রেফারী খোরশেদ আলম। এরপর একটি ফাউলের কারণে উদয়নের অধিনায়ক শাকেরউল্লাহকে হলুদ কার্ড দেখান তিনি। শাকেরউল্লাহর আগেও একটি হলুদ কার্ড থাকায় তা লালকার্ডে পরিণত হয়। এরপর শুরু হয় উদয়ন কর্মকর্তাদের তীব্র অসন্তোষ। তাঁরা রেফারীর এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে থাকেন। কর্মকর্তা জোবায়েরসহ অনেকেই খেলোয়াড়দের মাঠ ছেড়ে আসারও ইঙ্গিত করেন। খেলোয়াড়রা মাঠ না ছাড়লেও রেফারীর সিদ্ধান্ত নিয়ে অসস্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন। লাল কার্ড দেখা শাকেরউল্লাহকেও মাঠ ত্যাগ করতে নিষেধ করতে থাকেন কর্মকর্তারা। এই নিয়ে খেলা বন্ধ থাকে ১৬ মিনিটে। এক পর্যায়ে সিজেকেএস এবং সিডিএফএ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে উদয়ন আবার খেলা শুরু করতে সম্মত হয়। তারা তখন ১০ জনের দলে পরিণত হয়েছে। এরপরও খেলায় ফিরে আক্রমণ করে খেলতে থাকে উদয়ন। দলের দিদারুল ইসলাম সৈনিক এ অর্ধের শেষ দিকে বল নিয়ে বঙে ঢুকে পড়েন। সেখানে তাকে ফাউল করে ফেলে দেয় শতদলের রক্ষণভাগ। রেফারী খোরশেদ পেনাল্টির বাঁশি বাজান উদয়ন সংঘের অনুকূলে। এরপর শুরু হয় শতদল ক্লাব কর্মকর্তাদের তাণ্ডব। তারা মাঠে ঢুকে পড়েন। বর্ষীয়ান কোচ খোকন রেফারীর দিকে তেড়ে যান। কর্মকর্তা সুমন,বাবু রেফারীকে নাজেহাল করতে থাকেন। এই সময় পুরো মাঠ জুড়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিককালে ফুটবল লিগে এমন অরাজক ঘটনা দেখা যায়নি। এক পর্যায়ে শতদলের নাজিমকে ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে রেফারীর দিকে তেড়ে গিয়ে হাত তুলতে দেখা যায়। চেয়ার এবং বেল্ট খুলে দৌড়তে থাকা রেফারীকে মারতে উদ্যোত হয় তারা। তাদেরকে দফায় দফায় রেফারীর দিকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়। তাদের মারমুখি আচরণ এ সময় নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না সিজেকেএস, সিডিএফএ কর্মকর্তারা। ৪র্থ রেফারী এবং ম্যাচ এডজুডিকেটরের চেয়ার–টেবিল, কাগজপত্র এসময় ছুড়ে ফেলে দেন উত্তেজিত কর্মকর্তারা। এভাবে ৩৪ মিনিট অতিক্রান্ত হয়। অনেক দেন দরবারের পর আয়োজক কর্মকর্তারা খেলা মাঠে ফেরাতে সক্ষম হন। তবে মূল রেফারী খোরশেদ আলম আর হাতে বাঁশী নেননি। তাঁর জায়গায় ৪র্থ রেফারী তরিকুল ইসলাম বাকি খেলা পরিচালনা করেন। মাঠে উপস্থিত অনেকেই এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অভিজ্ঞ রেফারী দিয়ে খেলা পরিচালনা না করায় আয়োজকদের সিদ্ধান্তকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেন। খেলায় ফিরে পেনাল্টি থেকে গোল করে উদয়নকে এগিয়ে নেন আফরোজ আলী। দ্বিতীয়ার্ধের ২৩ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে হেড করে আবারো গোল করেন আফরোজ আলী। দুই গোলে এগিয়ে যায় উদয়ন সংঘ। এ অর্ধের ৩০ মিনিটের সময় আবার খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এবার বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ফ্লাড লাইট নিভে যায়। পুরো মাঠ অন্ধকার হয়ে পড়ে। বাকি খেলা হবে কি হবে না এই যখন অবস্থা তখন ৪১ মিনিট পরে আসে বিদ্যুৎ। খেলাও আবার শুরু হয়। শতদলের শান্ত একটি শান্তনাসূচক গোল পরিশোধ করলে খেলার স্কোর লাইন দাঁড়ায় ২–১। এই ব্যবধানেই ভয় ছড়ানো খেলায় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদারবাড়ির ক্লাবটি। গতকালের খেলায় ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মাদারবাড়ী উদয়ন সংঘের খেলোয়াড় আফরোজ আলী। খেলা শেষে তার হাতে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কার তুলে দেন সিজেকেএস কাউন্সিলর মো. শাহ পরান। আজ বিকাল ৩টায় কোয়ালিটি স্পোর্টস ক্লাব এবং কাস্টমস এস.সি. পরস্পরের মোকাবেলা করবে।