ঘটনা ফাঁস করায় এতিম শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা

১৩ বছর পর ঘটনাটি প্রমানিত হওয়াই যাবজ্জীবন

| বুধবার , ৮ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩৬ অপরাহ্ণ

সাত বছরের এতিম শিশু নিশি সুলতানা। দুনিয়াতে নাই তার মা-বাবা, হারিয়ে অনেক আগে। থাকতেন চাচার বাসায়। তবে কে জানতো ঘরের মোবাইলটি কে চুরি করেছে তা বলে দেওয়াই শিশু নিশি কাল হয়ে দাড়িয়েছিল পাশের ঘরের কোরবানের মা? চুরির ঘটনা ফাঁস করে দেওয়াই এতিম শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা। প্রায় ১৩ বছর পর ঘটনাটি প্রমানিত হওয়াই অভিযুক্ত ঐ মহিলাটির যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন চট্টগ্রাম আদালত।

বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমানিত হওয়াই অভিযুক্ত নাসিমা বেগমের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন এবং ৭ বছরের কারাদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম ৩য় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক জসিম উদ্দিন।

দন্ডপ্রাপ্ত নাসিমা বেগম সীতাকুন্ড থানার বাঁকখালী এলাকার আবদুল বাতেনের মেয়ে। রায় ঘোষনার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাজা পরোয়ানা মুলে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিবারের একটি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে, আর তা ফাঁস করে দেয় শিশুটি। মহিলাটি মনে মনে বেশ ক্ষোভ রেখে দেন শিশুটির উপর। একদিন শিশুটিকে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাবেন বলে শিশুটিকে পুকুরের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করে মহিলাটি। আর ঘটনাটি প্রমানিত হওয়ার অভিযুক্ত মহিলাকে একটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, আরেকটি ধারায় ৭ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত। অপরাধ ক‌রে কেউ পার পা‌বে না, আজ‌কের রায়ই তার প্রমাণ। আমরা চাই সমা‌জে এরকম ঘটনা আর না ঘটুক।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ২০১০ সালে চট্টগ্রাম শহরের কাপ্তাই এলাকার। মা বাবাকে নিয়ে খুলশিতে এলাকায় থাকতেন মো. ফারুক নামে এক লোক। আর তাদের সাথে থাকতেন ৭ বছর বয়সি এতিম শিশু নিশি সুলতানা নিশিও। নিশি হলো ফারুকের বড় ভাইয়ের মেয়ে। বাবা-মা মারা যাওয়ায় চাচার বাসায় থাকতেন শিশু নিশি। একদিন ঘরের নকিয়া মোবাইল সেটটা পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজি করছিল পরিবারের সদস্যরা। ঠিক তখনি এতিম শিশুটি বলে উঠে, “মোবাইলটি পাশ্বের বাড়ি কোরবানের মা নাসিমা বেগম আমাদের বাসায় ঢুকে নিয়ে গেছে”। আর নাসিমা বেগম ঘটনটি প্রথমে অস্বীকার করলেও, পরে তার স্বামী বাবার আলী মোবাইলটি নতুন কিনে দিবেন বলে স্বীকার করেন। কিন্তু কে জানতো ঐ এতিম শিশু নিশির উপর ক্ষোভ রেখে দিয়েছিল নাসিমা বেগম।

একদিন হঠাৎ খুঁজে পাচ্ছিলনা নিশিকে। নিশিকে খোঁজে না পেয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা শুরু ক‌রেন শিশুটির চাচা মো. ফারুক। এক পর্যায়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাসিমা বেগম স্বীকার করেন তার সন্তানদের সাথে তার বাপের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গেছিল নিশিকে, পরে কাপ্তায় এলাকার মেহেরাজ চৌধুরী ঘাটার একটি পুকুরের পানিতে ধাক্কা দিয়ে নিশৃংসভাবে হত্যা করে নিশিকে। পরে নাসিমাকে আটকের পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বহু তদন্তে শেষে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে আদালত ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় অভিযুক্ত নাসিমা বেগম কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচোলাই মদ সহ মাদক কারবারী পুলিশের জালে
পরবর্তী নিবন্ধ“আপনার মেয়ে উপবৃত্তি পেয়েছে” জানিয়ে প্রতারণা