সেনা, পুলিশ বা সাধারণ মানুষ–সবার ক্ষেত্রে আইন সমান, গ্রেপ্তারের ক্ষমতা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, অন্য কারও নয় বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গুমের মামলায় পরোয়ানাভুক্ত সেনাসদস্যদের গ্রেপ্তার এবং ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গতকাল সোমবার বিকালে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক চলে। শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার ফের দিন রাখা হয়। খবর বিডিনিউজের।
এদিন ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে সারাদিন যুক্তিতর্ক চলে। অপর দুই বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে বিকালে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইনের দৃষ্টিতে পুলিশ, আর্মি, সিভিলিয়ান বলে কোনো জিনিস নেই। আইন সব সময় ব্যক্তিকে বিবেচনা করবে। সেই ব্যক্তির গায়ে কত দামি পোশাক আছে অথবা বস্ত্রহীন কিনা–এটা দেখবে না। প্রত্যেক মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সমান।
এখানে কারও উঁচু, কারও নিচু মর্যাদা, কারও জন্য অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং বাংলাদেশের একজন বস্ত্রহীন বা রাস্তায় বাস করা মানুষের যেমন অধিকার, ঠিক একইভাবে কেউ যদি ইউনিফর্মে থাকেন বা আরও দামি পোশাক পরিহিত থাকেন তার মর্যাদাও একই রকম।
বাংলাদেশি পোশাক :
পরোয়ানাভুক্ত সেনাসদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ক্ষমতা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আদালতের আদেশটা পালনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসকে অবহিত করা হয়েছে। তারা গ্রেপ্তার করবে না। তারা অবহিত থাকার অর্থ হচ্ছে যখন পুলিশ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটা তামিল করতে যাবে, তারা অবহিত থাকলে এই পরোয়ানাটা তামিল করতে তাদের সাহায্য করতে পারবে। সুতরাং গ্রেপ্তারের ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, অন্য কারও নয়।
সেনা কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে প্রধান কৌঁসুলি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো না হয়েছে, অর্থাৎ যদি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে, তখন থেকে এ আইন প্রযোজ্য হবে, ২৪ ঘণ্টায় আদালতে আনতে হবে। কিন্তু যদি গ্রেপ্তার না দেখানো হয়, তাহলে ওই আইন প্রযোজ্য নয়। যখনই গ্রেপ্তার দেখানো হবে বা গ্রেপ্তার করা হবে, তখন থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই আদালতে প্রডিউস করতে হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়ার ঘোষণার পরদিন রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে এ কারাগারে কাদের রাখা হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।