২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল হোতা ও বাস্তবায়নকারী ১৯ জনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ওপর হাই কোর্টে বাধ্যতামূলক ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্যে প্রায় প্রস্তুত। হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ এখন নিম্ন আদালতের ৩ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক নিয়ে কাজ করছে, যেখানে মামলার বিস্তারিত সবকিছু রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ডেথ রোফারেন্স শুনানির জন্যে মামলা প্রস্তুত করতে মাত্র একদিন শুনানির পর বাকি পৃষ্ঠাগুলো পড়া শেষ হবে। আমি মনে করি, মামলাটি নিষ্পত্তির জন্যে হাই কোর্টের ১০ থেকে ১২টি শুনানি লাগতে পারে। তার ধারণা, চলতি অক্টোবরের মধ্যে হাই কোর্টের রিভিউ শেষ হতে পারে। খবর বাসসের।
এদিকে বাংলানিউজ জানায়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আশা করি আগামী তিন মাসের মধ্যে হাই কোর্টেও মামলার কাজ শেষ হবে।
ঢাকার একটি আদালত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এই হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরো ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা থাকায় এবং দোষীরাও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করায় রায়টিকে বাধ্যতামূলক আইনি পর্যালোচনার জন্য হাই কোর্টে পাঠানো হয়, যাকে ডেথ রেফারেন্স শুনানি বলা হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মতে, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কর্তৃক মনোনীত বিচারপতি শহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে ডেথ রেফারেন্স এবং দোষীদের আপিলের শুনানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমিন উদ্দিন বলেন, এখানে আসলে দুটি মামলা রয়েছে; একটি খুন এবং অন্যটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে, দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চক্রান্তকারীরা সেই নজিরবিহীন আক্রমণের মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর প্রধান আসামিরা হলেন তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি হুজি–বি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাবেক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি আসামিরা হলেন জঙ্গি মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ, আবু সাঈদ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের, হোসেন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ উজ্জল এবং পরিবহন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হানিফ।
তারেক রহমান ছাড়াও যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। জঙ্গি শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, আবদুর রউফ, সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান, হাফেজ ইয়াহিয়া, আবু বকর, আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোহাম্মদ ইকবাল, লিটন, শফিকুর রহমান, আবদুল হাই ও রাতুল আহমেদ বাবুকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।