বাঁশখালীতে গ্রাহকের বন্ধক রাখা স্বর্ণ নিয়ে উধাও হয়েছেন এক জুয়েলার্স মালিক। বিটু ধর নামে ওই জুয়েলার্স মালিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাঁশখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বাহারছড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আজিজ আহমদ চৌধুরী। ওই দোকানে তার ২ ভরি সাড়ে ১৪ আনা স্বর্ণ বন্ধক রয়েছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত বিটু ধর বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের বশির উল্লাহ মিয়াজী বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ‘ভাশা আউলিয়া জুয়েলার্স’ নামে একটি দোকান করতেন। তিনি কালীপুর ইউনিয়নের সুনীল ধরের পুত্র। বাঁশখালী থানার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগে স্বর্ণ বন্ধকদাতা আজিজ আহমদ চৌধুরী বাদী হলেও অপর বন্ধকদাতা মোহাম্মদ লোকমান, মো. আনছার, ডা. আবু তৈয়ব, হুমাযুন করিব, মো. ফোরকান ও সাফিয়া বেগমকে সাক্ষী হিসাবে রাখা হয়। তাদের অভিযোগে শতাধিক ব্যক্তির স্বর্ণ নিয়ে বিটু ধর উধাও হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় ।
জানা যায়, ‘ভাশা আউলিয়া জুয়েলার্স’ নামে ওই দোকানে বিটু ধরের পাশাপাশি তার অপর দুই ভাই টিটু ধর ও মিন্টু ধরও কার্যক্রম করতেন। এলাকার জনগণ প্রয়োজনে তাদের দোকানে স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদে টাকা নিতেন। করোনাকালে দোকান বন্ধ থাকায় কালীপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে বিটু ধরের বাড়িতে যান স্বর্ণ বন্ধকদাতারা। তাদের জানানো হয়, স্বর্ণগুলো অন্য দোকানে বন্ধক রেখেছেন তিনি। জুন মাসে সে দোকান থেকে এনে তাদের দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু জুন মাসের পর থেকে বিটু ধর উধাও হয়ে যান। স্বর্ণ বন্ধকদাতাদের বিটু ধরের অপর দুই ভাই টিটু ধর, মিন্টু ধর এবং স্থানীয় অনিল ধর ও ভোলা ধর যারা স্বর্ণ ফেরত দেওয়ার নামে বার বার সময় নিয়েছিলেন কিন্তু তারাও কোনো ধরনের সুরাহা দিতে না পারায় অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাঁশখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বাহারছড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও ২ ভরি সাড়ে ১৪ আনা স্বর্ণ বন্ধক দাতা আজিজ আহমদ চৌধুরী।
আজিজ আহমদ বলেন, আমি ৬০ হাজার টাকায় স্বর্ণ বন্ধক রেখে তা ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা প্রদান করি। জুনে আমাকে স্বর্ণ দেবে বলে জানিয়েছিল। পরে দেখি তার দোকানের সব মালামাল গোপনে সরিয়ে ফেলে। পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও কোন সুরাহা দিচ্ছেন না। বার বার সময় নিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে প্রশাসনের কাছে আশ্রয় নিলাম। মোহাম্মদ লোকমান নামে অপর স্বর্ণ বন্ধকদাতা বলেন, আমি ২ ভরি ২ আনা ৬০ হাজার টাকায় বন্ধক রাখি। তা ছাড়িয়ে নিতে ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু স্বর্ণ ফেরত দেওয়ার সময়ে দেখি দোকানের মালামাল সহ উধাও হয়ে যায়। লোকমান জানান, আরো শত শত লোক আছে যারা স্বর্ণ সেখানে বন্ধক রেখেছে। বশির উল্লাহ মিয়াজী বাজারে ফার্মেসির মালিক আবু তৈয়ব বলেন, আমার ৪ ভরি স্বর্ণ বন্ধক রয়েছে তার কাছে। টাকা নিয়ে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ মালামাল নেই। এখানকার অনেকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনো সুরাহা করছে না। বার বার সময় ক্ষেপণ করছে। তিনি বলেন, স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণগুলো নিয়ে পালিয়ে গেছে বিটু ধর। আমরা প্রশাসনের কাছে তার বিচার দাবি করছি। এদিকে এ ব্যাপারে জানতে ভাশা আউলিয়া জুয়েলার্সের মালিক বিটু ধরের ০১৮১৪৩০৭৬৬৯ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, এলাকার বেশ কিছু লোক আমার কাছে স্বর্ণ ফিরে পেতে সহযোগিতা চাইলে আমি স্বর্ণ ব্যবসায়ীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ এবং আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলি। তারই প্রেক্ষিতে তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি সনজিত ধর বলেন, যাদের স্বর্ণ বন্ধক রেখেছে তাদের স্বর্ণগুলো যাতে ফেরত পায় সে জন্য আইনের আশ্রয় নেওয়া প্রয়োজন। তবে দোকানের মালিক (স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ভাড়া দেওয়া) তার দোকান খুলতে ও ভাড়ার টাকা পেতে আমার কাছে আসলে আমি তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে বলি।
বাঁশখালী থানার ওসি (তদস্ত) মো: কামাল উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলে তিনি জানান।