গ্রামকে ভালোবাসে না এরকম মানুষ খুব কমই দেখা যায়। শহরের যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে একটু কোলাহল একটু প্রশান্তির জন্য আমাদের মন সবসময় হাহাকার হয়ে থাকে। আর এই হাহাকার থেকে মুক্তির জন্য আমরা চাই একটু নীরব, একটু কোলাহলমুক্ত, একটু প্রশান্তি, একটু নির্মল আনন্দ। আর এই নির্মল আনন্দ আর কোলাহল পরিবেশের জন্য গ্রামই উপযুক্ত জায়গা। আমাদের দেশে এখনো প্রায় ৭০ ভাগ মানুষকে গ্রামেই বসবাসে অভ্যস্ত। আজকাল গ্রামে শহরের মতই সকল রকম নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আর গ্রামকে ভালোবাসতে পারাটা আমাদের জন্য অনেক বেশি আনন্দের। গ্রামকে ভুলে থাকা কোন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের কমবেশি প্রায়ই গ্রাম থেকে বেড়ে উঠি। গ্রামেই আমাদের অনেকের শিক্ষার মূল ভিত্তি। গ্রাম থেকেই প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে আমরা অনেকেই দেশের প্রতিষ্ঠিত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়। আর এক সময় গ্রামের সেই মেধাবী শিক্ষার্থীটিই নামী দামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদান বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করতে সক্ষম হয়।
আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত কমবেশি সকল মানুষের শিকড় ঠিকই তাঁর ফেলে আসা সেই নিভৃত পল্লী বা গ্রাম। তাই আমরা যত বড় পদে বা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় না কেন আমাদের সেই জন্মস্থান সেই নিভৃত পল্লী বা গ্রামকে কখনো ভুলা যাবে না। গ্রাম ভুলে যাওয়া মানে নিজেকে ভুলে যাওয়া। আমরা যেথানে যে শহরেই থাকি না কেন সময় সুযোগে আমাদের গ্রামে ছুটে আসা উচিত। কেননা এই গ্রামেই আমাদের শিকড়। আমাদের দাদা দাদী, নানা, নানী পিতা, মাতা, চাচা, চাচীসহ অনেকেই কমবেশি গ্রামেই বসবাস করে। তাদের খোঁজ খবর নেয়া, তাদের চিকিৎসা সহ অন্যান্য বিষয়ে দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক সন্তানের নাগরিক দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালন আমাদের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের সন্তান তথা ৩য় প্রজন্মকে তাদের দাদা, দাদী, নানা, নানী, চাচা, চাচী ফুফি, ফুফাসহ গ্রামের আত্নীয় নিকটাত্নীয়দের সাথে পরিচিত এবং আত্নার বন্ধন সৃষ্টি করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর গ্রামে না আসা মানে আমাদের শিকড়, আমাদের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করা। আর গ্রামের সবুজ প্রকৃতি, গ্রামীণ খেলাধুলা, গ্রামীণ সংস্কৃতি, গ্রামীণ পরিবেশ, গ্রামীণ মেলবন্ধন, গ্রামের কোলাহলসহ গ্রামীন জীবনের সাথে আমাদের সন্তানদের পরিচিতি ঘটানো জরুরি। আর গ্রাম সবসময় আনন্দমুখর হয় ঠিক তেমন নয়।
তারপরেও গ্রাম আমাদের জন্য এখনো অনেক কোলাহল এবং আনন্দময়। আর গ্রামের উন্মুক্ত পরিবেশে শিশু কিশোরদের খেলাধুলা কিংবা সমবয়সী শিশু কিশোরদের সাথে মেলামেশা আর গ্রামকে জানার সুযোগ পায়। শীতকালে গ্রামীণ খোয়াবাতির আনন্দও নিতে পারে শহরে ব্যস্ত থাকা মানুষরা। শীতের পিঠা, পুলির আনন্দও গ্রামে সহজে নেয়া যায়। এছাড়া ৬ ঋতুতে ৬ পার্বণের নানারকম পিঠা পুলির স্বাদও গ্রামে নেয়া সম্ভব। আসুন আমাদের শিকড়, আমাদের নাড়ির বন্ধন গ্রামকে আমরা সকলে ভালোবাসি, গ্রামের স্বজনকে একটু ভালোবাসা, একটু দায়িত্ব, একটু আন্তরিকতার পরশ ভুলিয়ে দিই। গ্রাম উন্নয়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখি।
জীবনের সেই ফেলে আসা গ্রামকে নিজের জীবনের পরতে পরতে যেন আমরা মনে রাখা চেষ্টা করি। প্রিয় গ্রামকে আমরা আমাদের হৃদয়ের মণিকোটায় স্থান দিই সবসময়। গ্রাম হোক সকলের আত্নার বন্ধন।