প্রায় দেড় বছর ধরে বৈদেশিক অর্থ সহায়তার জন্য ঝুলে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) দুই লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্প অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। প্রকল্পটিতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপম্যান্ট ব্যাংক (এডিবি)। ইতোমধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে পৃথক বৈঠকও করেছে এডিবির প্রতিনিধি দল। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) এবং গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এর দুই প্রকল্পে সাশ্রয়ী হওয়া ঋণের ৫৮ মিলিয়ন ডলার কর্ণফুলী গ্যাসের এই প্রকল্পে অর্থায়নের কথা রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ‘ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট’ নামে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজনের জন্য ২২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ওই প্রকল্পে ১৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ২১ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা দেয় জাইকা। ২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাকুল্যে ব্যয় হয় ১৪৯ কোটি টাকা। এতে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার অধিক ব্যয় সাশ্রয় হয় প্রথম প্রকল্পে। দেশের অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোতে প্রিপেইড মিটার জনপ্রিয় না হলেও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রিপেইড মিটারে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে নতুন করে প্রিপেইড মিটার পেতে কর্ণফুলী গ্যাসে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন আবাসিক গ্রাহকরা। ফলশ্রুতিতে মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে ‘ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট (ইন্সটলেশন অফ প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল পার্ট-টু)’ প্রকল্পটি হাতে নেয় কর্ণফুলী গ্যাস। ৫১৭ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে ১১৭ কোটি টাকা কর্ণফুলী গ্যাস নিজেদের তহবিল থেকে অবশিষ্ট চারশ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ সুবিধায় চার বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেজিডিসিএল তাদের প্রথম প্রকল্পটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করলেও জাইকার অর্থায়নে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে অন্য তিন প্রকল্প বাস্তবায়নে বার বার সময় বাড়ানোর কারণে দীর্ঘদিন থেকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল জাইকা। যে কারণে অর্থায়ন জটিলতায় পড়ে দুই লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পটি। পরে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) সাথেও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলোচনা করে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তাতেও অর্থায়নের নিশ্চয়তা মিলেনি। সর্বশেষ প্রকল্পটিতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে এডিবি। এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং কেজিডিসিএলের সাথে বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে এডিবি প্রতিনিধিদল নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাবনা চেয়েছে। এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়িত বিজিডিসিএল এবং জিটিসিএলের দুই প্রকল্পে সাশ্রয়ী ঋণের ৫৮ মিলিয়ন ডলার (ডলার ৮৪ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি ৪৮৭ কোটি টাকা) কর্ণফুলী গ্যাসের দুই লাখ প্রি পেইড মিটার প্রকল্পে অর্থায়নের কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দুই লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে ইতোমধ্যে এডিবি অর্থায়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলা ও কর্ণফুলী গ্যাসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠকও হয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস থেকে প্রকল্পটির বিষয়ে নতুন করে প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে।’ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এডিবির অর্থায়নে বাখরাবাদ ও জিটিসিলের বাস্তবায়িত দুই প্রকল্পের একটিতে ৩৬ মিলিয়ন, অন্যটিতে ২২ মিলিয়র ডলার সাশ্রয় হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই দুই প্রকল্পের সাশ্রয়ী ঋণের অর্থই কর্ণফুলী গ্যাসের দুই লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে অর্থায়নের কথা রয়েছে।’