গ্যাস–বিদ্যুতের দাম নিয়ে সুখবর দিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, চলতি মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৪ কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করবে সরকার। তবে আপাতত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না। বুধবার (৭ মে) বিকালে সচিবালয়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রমজানে বিদ্যুৎ খাতের ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে কমিয়ে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস শিল্পে দেওয়া হবে। এছাড়া চারটি এলএনজি থেকে আমদানি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে শিল্পে গ্যাসের বরাদ্দ ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, একটা টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সরকার গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ দিচ্ছে। চলতি বছর ৫০টি কূপ খনন করা হবে। আগামী বছর এর সংখ্যা হবে ১০০। ইতোমধ্যে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২৭ এমএমসিএফডি নতুন গ্যাস পাওয়া গেছে এবং তা পাইপলাইনে যুক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
গ্যাস–বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের মানুষ। দাম বাড়ানো হলে সার্বিক জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তো। টাকার ক্রয়ক্ষমতা মুহূর্তের মধ্যে কমে যেতো। দেখা দিতো মূল্যস্ফীতি। চাল–ডাল–আটা থেকে অধিকাংশ পণ্যের দাম আরও বাড়তো। এমনিতেই বাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। এদিকে অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এরই মধ্যে যদি আবার এসব পণ্যের দাম বাড়ে, তাহলে এই চাপ তাদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠতো। সরকার এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেছে বলে সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার তারা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে, তেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় গ্যাসের চার গুণ এবং কয়লার তিন গুণ হওয়া সত্ত্বেও গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে সারা বছর তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়। বেসরকারি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সুবিধা দিতে সেগুলো থেকে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ কেনা হয়। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুসারে, বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) যে দামে ফার্নেস তেল আমদানি করে, তার চেয়ে প্রতি লিটারে ১৮ টাকা বেশি দর দেখিয়ে বিল নেয় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এতে বাড়তি ব্যয় আট হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয়ের কারণেই ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালানো হয়। পিডিবির কর্মকর্তারাও বলেছেন, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ১০ শতাংশ কমালে বছরে সাশ্রয় হতে পারে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ ব্যয় বেশি হওয়া সত্ত্বেও ২০২২–২৩ অর্থ বছরে ২৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে তেল ব্যবহার করে।
শুধু তেলভিত্তিকই নয়, সার্বিকভাবেই বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ সরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক বেশি। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন যত বাড়ছে, দেশের গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ তত বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে তারা উৎপাদন ধরে রাখতে পারছেন না। রপ্তানি আদেশ বাতিল হচ্ছে। এর মধ্যে কিছুদিন পরপর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ালে খরচ আরও বেড়ে যায়। আবারও বাড়ানো হলে কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। নতুন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ– ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ–জ্বালানির মূল্য না বাড়িয়েও ভর্তুকি প্রত্যাহার সম্ভব। এ জন্য জ্বালানি খাতে অপব্যয় ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করা গেলে এবং ন্যূনতম ব্যয়ে জ্বালানি সরবরাহ করার নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা হলে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি সমন্বয় সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভর্তুকি কমাতে দাম না বাড়িয়ে সরকারের উচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সিস্টেম লস কমানো। চাহিদার অতিরিক্ত যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই, অলস বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করে দিলে এ খাতের খরচ কমবে। তাঁরা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতা বিহীন যে কোনো ধরনের বিনিয়োগ বন্ধ করলে এই খাতের ব্যয় কমে আসবে। পাশাপাশি সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় এলএনজি, কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে।