কক্সবাজার শহরে কলাতলী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে গত শুক্রবার এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এই ধরনের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। বিপন্ন পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য কক্সবাজারে রয়েছে সজ্জিত লাইফ গার্ড, পুলিশ ও বীচকর্মী। তবু কেন সাগরে গোসলে নেমে বার বার মৃত্যু হয় পর্যটকদের? টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমানের মতে, কক্সবাজার সৈকতে পানির নীচে অনেক সময় গুপ্ত ক্যানেল ও গর্ত তৈরি হয়, যা পানির ওপর থেকে বুঝা যায় না। কোনো পর্যটক ভাটার সময় গোসল করতে নেমে স্রোতের টানে এই ধরনের গর্তে পড়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ডুবে মারা যায়। বিশেষ করে যারা ক্লান্তিকর অবস্থায় সাগরে নামেন অথবা দীর্ঘক্ষণ সাগরে গোসল করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাদের ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। তিনি বলেন, এ জন্য সাগরে ভাটার সময়েও নির্জন স্থানে গোসল না নামার জন্য পর্যটকদের অনুরোধ জানিয়ে আমরা নিয়মিত মাইকিং করি। কিন্তু অনেকেই তা শোনে না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থানা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের জন্য আমরা শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী- এই তিনটি পয়েন্টে বিশেষ ‘সুইমিং জোন’ করেছি, যেখানে লাল ও হলুদ পতাকা দিয়ে ঘেরাও করা থাকে। এসব পয়েন্টে সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাইফ গার্ড কর্মী ও পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বীচকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে গোসল করতে গিয়ে কোনো পর্যটক বিপন্ন হয়ে পড়লে জেট স্কিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সাহায্যে পানি থেকে ওই পর্যটককে দ্রুত উদ্ধার করে কূলে আনা হয়। এরপর বীচ বাইকযোগে পাঠানো হয় হাসপাতালে। এতে সময় লাগে বড় জোর দশ থেকে পনের মিনিট মাত্র। কিন্তু অনেক পর্যটক ‘সুইমিং জোন’ এর বাইরে নির্জন স্থানে গোসল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। কক্সবাজার সৈকতে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালনকারী বীচকর্মী মাহবুব আলম জানান, কঙবাজার শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে সাগরে ডুবে গত ৫ বছরে ২৬ জনের এবং গত ১০ বছরে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে কয়েকজন। এছাড়া জেলা সদরের বাইরে সেন্টমার্টিন, পেঁচারদ্বীপসহ আরো কিছু জনপ্রিয় সৈকত পয়েন্টে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। গতবছরও কঙবাজার শহরের তীরবর্তী সাগরে ডুবে ৬ জনের এবং সর্বশেষ গত শুক্রবার শহরের কলাতলীস্থ ডিভাইন পয়েন্ট সাগরে ডুবে শাহেদ হোসেন বাপ্পী নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ওইদিন সকালে আরও চার বন্ধুর সাগরে গোসল করতে নেমেছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, সৈকতের চোরা ক্যানেল ও গর্ত সবসময় একই স্থানে থাকে না। প্রতিদিন জোয়ার ভাটার-সময় লাইফ গার্ড ও বীচকর্মীরা পরীক্ষার পর সৈকতে ‘নিরাপদ সু্ইমিং জোন’ চিহ্নিত করে লাল ও হলুদ পতাকা পুঁতে দেন। এই জোনের বাইরে কেউ সাগরে নামতে চাইলে বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন বীচকর্মীরা। এছাড়া সৈকতের প্রবেশপথে রয়েছে সতর্কতা বিলবোর্ড, করা হয় মাইকিংও। কিন্তু অনেক পর্যটক কোনো বাধাই মানেন না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহনওয়াজ চৌধুরী বলেন, সৈকতে একের পর এক ঢেউ এসে যখন পানি মাথার ওপরে ওঠে যায়, তখনই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। তখন যদি কেউ নিজেকে ভাসিয়ে রাখে অথবা কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে পানির নীচে ডুবিয়ে রাখে, তাহলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো যায়। আর এ জন্য সাগরে নামার আগে পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রাথমিক কৌশল জেনে নিতে হবে অথবা হাঁটু পরিমাণ পানির বেশি গভীরে যাওয়া উচিত হবে না।