রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে বিপুল অর্থ, অস্ত্র-মদসহ গ্রেপ্তার মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে আট বছর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, বৃহস্পতিবার অনুমোদন পাওয়া এই অভিযোগপত্রে মনিরের বিরুদ্ধে তিন কোটি ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শিগগিরই এ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনির তার সম্পদের হিসাবে এক কোটি ৬১ লাখ টাকার সম্পদ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে দান হিসেবে পাওয়ার ভুয়া তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া আরও এক কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ লাখ ৩৩৫ টাকার সম্পদের তথ্য তিনি হিসাব বিবরণীতে দিয়েছেন, যার কোনো বৈধ উৎস দুদকের তদন্তে পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২০১২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকার রমনা মডেল থানায় মনিরের বিরুদ্ধে এই মামলা করে দুদক। তার আগে তার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়। সেই নোটিস পেয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সম্পদের হিসাব কমিশনে জমা দেন মনির। পরে হাই কোর্টে এ বিষয়ে একটি রিট মামলার কারণে দুদকের তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
তদন্ত শেষ হতে আট বছর সময় লাগার কারণ ব্যাখ্যা করে দুদক কর্মকর্তা প্রনব বলেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ছিল। এরপর কমিশনের এক সহকারী পরিচালককে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তাও বদলি হয়ে যাওয়ায় তদন্ত কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। পরে দুদকের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন মৃধা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন, যা বৃহস্পতিবার কমিশনের অনুমোদন পেল।
মনিরের বিরুদ্ধে আরেকটি অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে প্রনব বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে তার অর্জিত অবৈধ সম্পদের বিষয়ে এ অনুসন্ধান চলছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মনির ও তার স্ত্রী রওশন আক্তারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে। নতুন এই অনুসন্ধানে তার প্রচুর অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের স্বাক্ষরে গত ২৬ নভেম্বর পাঠানো ওই নোটিসে মনির ও তার স্ত্রীকে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মেরুল বাড্ডায় মনিরের ছয়তলা বাড়িতে গত ২০ নভেম্বর রাতে অভিযান চালায় র্যাব। অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে এই অভিযান চালানোর পর মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে মনিরের বাড়ি থেকে নগদ এক কোটি নয় লাখ টাকা, চার লিটার মদ, আট কেজি সোনা, একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মনিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসা নয়, কার্যত সোনা চোরাচালানই ছিল মনিরের ব্যবসা; পরে তিনি জড়িত হন জমির ব্যবসায়। এক সময় নিউ মার্কেট এলাকায় মনিরের একটি সোনার দোকান ছিল। স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসার সময় তিনি গোল্ডেন মনির নামে পরিচিতি পান। তবে ২০০১ সালের পর এই ব্যবসা গুটিয়ে জমির ব্যবসায় মন দেন।
মনিরের বাড়িতে পাঁচটি গাড়ি পাওয়া গেছে, যার মধ্যে তিনটি গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই বলে সেগুলো জব্দ করেছে র্যাব। তার এক হাজার ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব। বাড্ডা, নিকেতন, কেরানীগঞ্জ, উত্তরা ও নিকুঞ্জে দুইশর বেশি প্লট রয়েছে তার। রাজউকের সিল নকল করে ভূমি দখলের অভিযোগেও একটি মামলা রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে।