গোপাল হালদার : সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক

| মঙ্গলবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

গোপাল হালদার-(১৯০২১৯৯৩)। সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। গোপাল হালদার বিশেষভাবে পরিচিত কমিউনিস্ট আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ বামপন্থী চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক হিসেবে। বিংশ শতাব্দীর অনেকটা সময় জুড়ে যাঁরা সাহিত্যের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন অথচ সেইসঙ্গে সক্রিয় রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক মতাদর্শের আড়াআড়ি সত্ত্বেও যাঁরা সমাজে সর্বজনশ্রদ্ধেয় থেকে গেছেন, তাঁদের একজন গোপাল হালদার। বিশ শতকের কথাসাহিত্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। গোপাল হালদারের জন্ম ১৯০২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিক্রমপুরের বিদগাঁও গ্রামে। শিক্ষা জীবনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ ও আইন শাস্ত্রে বি.এল ডিগ্রি অর্জন করে কিছুকাল নোয়াখালিতে আইন ব্যবসা শুরু করেন গোপাল হালদার। কিন্তু মানসিক স্বস্তি খুঁজে পেলেন না এ পেশায়। যুক্ত হলেন পত্রিকা সম্পাদনায়। অধ্যাপনাও করলেন কিছুকাল। ১৯৩২ সালে তিনি যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব বিভাগে গবেষণা সহকারি, ব্রিটিশবিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় পাঁচ বছর দশ মাস কারাবরণ করেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবেও কারাগারে থাকতে হয়েছে ১৯৪৯ সালে। তিনি মোট বারোটি উপন্যাস লিখেছেন। বিষয়বস্তুর দিক থেকে বিবেচনা করলে একে পর্বে পর্বে বিভক্ত তিনটি পৃথক উপন্যাস বলা যেতে পারে। যেমন ভূমিকা, নবগঙ্গা, জোয়ারের বেলা, ভাঙন, স্রোতের দ্বীপ, উজানগঙ্গা এগুলোকে একত্রে বলা যায় ভদ্রাসন পর্বের উপন্যাস। ‘একদা’, ‘অন্যদিন’, ‘আর একদিন’ এই তিনটির একত্রিত নাম ত্রিদিবা। পঞ্চাশের পথ, ঊনপঞ্চাশী এবং তেরশ পঞ্চাশ এগুলোকে বলা যেতে পারে মন্বন্তরের উপন্যাস। তাঁর উপন্যাসগুলা ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভাবাদর্শেরই প্রতিচ্ছবি। সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর অগাধ প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সংস্কৃতির রূপান্তর’, ‘বাঙালি সংস্কৃতির রূপ’ ও ‘বাঙালি সংস্কৃতি প্রসঙ্গ’ গ্রন্থগুলোতে। সংস্কৃতির রূপান্তর গ্রন্থটি মার্কসবাদী দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের আলোকে রচিত মানব সংস্কৃতি বিকাশের পরিচয়বাহী।এছাড়া ইতিহাস বিষয়ে তাঁর ব্যাপক অধ্যয়ন, গভীর চিন্তাশীলতা ও কুশলী রচনার ছাপ পড়েছে দুই খণ্ডে রচিত ‘বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা’, ‘ইংরেজি সাহিত্যের রূপরেখা’ ও ‘রুশ সাহিত্যের রূপরেখা’ গ্রন্থে। ‘রূপনারাণের কূলে’ লেখকের আত্মজীবনীমূলক চমৎকার একখানা গ্রন্থ। এছাড়া একটি গল্পগ্রন্থ ও বারোটি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। সমকালীন সমাজ বাস্তবতা ব্যঞ্জনাময় অভিব্যক্তি পেয়েছে তাঁর গল্প ও উপন্যাসে। ১৯৯৩ সালের ৩ অক্টোবর ৯১ বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে