দেবতা কহিল, ‘মোরে দূর করি দিলে।
জগতে দরিদ্ররূপে ফিরি দয়াতরে,
গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে।’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘দেবতার বিদায়’ কবিতায় যে-কথাটি উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মর্মার্থ উপলব্ধি করেছেন অক্ষরে অক্ষরে। ফলে তাঁর সরকার সারা দেশে ৬৬,১৮৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আধা-পাকা ঘর দিয়েছে। প্রথম দফায় ৬৬ হাজারের বেশি মানুষকে ঘর দেয়া হলেও দ্বিতীয় দফায় আগামী মাসে আরো এক লক্ষ ঘর তৈরি করে দেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের কাছে প্রদত্ত প্রতিটি ঘরে দুটি শয়নকক্ষ, একটি করে বারান্দা, রান্নাঘর ও বাথরুমসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা অনুযায়ী ভূমিহীনদের দুর্যোগ সহনীয় ওই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানে শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশে ঘর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় ৫৩৮টি ঘর দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় ৬৫টি, পটিয়ায় ১১৫টি, চন্দনাইশে ৭৫টি, সাতকানিয়ায় ৩০টি, লোহাগাড়ায় ১৮টি, বাঁশখালীতে ২৫টি, ফটিকছড়িতে ১৮৫টি ও কর্ণফুলী উপজেলায় ২৫টি।
মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর উপহার বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আজকে এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব, এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশের মানুষের হতে পারে না।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব পরিবারকে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন ৪৯২টি উপজেলার মানুষ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন এই মানুষগুলো এই ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা-মার আত্মা শান্তি পাবে। লাখো শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। কারণ এসব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তো ছিল আমার বাবার লক্ষ্য। তিনি বলেন, খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল নিজে আপনাদের হাতে জমির দলিল তুলে দিই। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য হলো না। তারপরেও আমি মনে করি, দেশ ডিজিটাল হয়েছে বলেই এভাবে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমরা প্রত্যেক শ্রেণির জন্য কাজ করছি। সব মানুষকেই ঠিকানা করে দেব, এটাই আমার লক্ষ্য।
মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার ধারাবাহিকতায় পৌনে ৯ লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রথমে ৬৬ হাজার ১৮৯টিকে ঘরের মালিকানা দেওয়া হলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিনে এত মানুষকে ঘর দিতে পারলাম, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যাদের গৃহ নেই তাদের ঘর করে দিতে পারা অসাধ্য সাধন করতে পারলাম, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হতে পারে না। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই এত বড় অসাধ্য সাধন হয়েছে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তাদের কর্মসংস্থান যদি একই স্থানে না হয় তাহলে এই উদ্যোগের সুফল অনেক ক্ষেত্রে নাও পাওয়া যেতে পারে। যাদের ঘর দেয়ার জন্য বাছাই করা হলো, তাদের যদি ঐ এলাকাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। নইলে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের এই কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।
তাঁরা বলেন, আমাদের প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে মানুষ কিন্তু যেখানে কাজ সেখানে থাকতে চায়। যখন মানুষের গ্রামে কাজ না থাকে তারা তখন বাড়ি-ঘর ফেলে শহরে চলে যায়। শহরে যেয়ে তারা কাজের খোঁজ করে এবং বাড়িঘরে তালা মারা থাকে। সেক্ষেত্রে এটা কোন কাজে লাগবে না। তবে কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণের সুবিধা এবং প্রশিক্ষণের সুবিধা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছর যাতে তারা ঘর বিক্রি করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার খাস জমির বন্দোবস্ত করলে সেটা আর বিক্রি করা যায় না। অর্থাৎ যারা আজ ঘর পেয়েছেন তারা এই ঘর বিক্রি করতে পারবেন না।
ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভূতপূর্ব কাজ সম্পাদন করেছেন, যা সত্যি মুজিববর্ষে বড় উপহার।