বাসায় গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য আদালতের ৬ দফা নির্দেশনা এসেছে ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যা মামলার রায়ে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েই এ ধরনের অপরাধ প্রতিহত করা সম্ভব। এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এ মামলার আসামিরা কোনোভাবেই অনুকম্পা পেতে পারে না। বিচারক বলেন, গৃহকর্মী মোসাম্মৎ রেশমা আক্তার ওরফে রুমা ও রিতা আক্তার ওরফে স্বপ্নার মত আর কেউ যেন ভুল পথে অগ্রসর হতে না পারে, সেজন্য বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীকেও জরুরিভাবে সতর্ক হতে হবে। সেই সতর্কতার জন্য ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে। খবর বিডিনিউজের।
১. গৃহকর্মী নিয়েগের তারিখ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত তাকে সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে তারা বাসার মূল্যবান মালামাল চুরি করে পালিয়ে যেতে না পারে। গৃহকর্মী কোনো অন্যায় কাজ করলে তাকে কোনো প্রকার আঘাত বা মারধর না করে সংশ্লিষ্ট থানা বা সমাজসেবা অফিসারকে এ বিষয়ে অবগত করতে হবে।
২. বাসার গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই তার বিস্তারিত তথ্য রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে গৃহকর্মীর জীবন বৃত্তান্ত ও ছবি রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট থানায় তা জমা দিতে হবে।
৩. বাসার মূল প্রবেশ পথে সিসি ক্যামেরা না থাকলে অবিলম্বে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কোনো গৃহকর্মী যদি অন্য কোনো গৃহকর্মীকে কোনো বাসায় কাজ দেয়, তাহলে তার নাম ঠিকানাও সংশ্লিষ্ট থানায় সংরক্ষণ করতে হবে।
৫. গৃহকর্মী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট থানাকে কোম্পানির কার্যক্রমের বিষয়ে অবগত করতে হবে। লাইসেন্স না থাকলে সেই কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
৬. গৃহকর্মী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই তাদের নিবন্ধিত গৃহকর্মীদের ছবি ও জীবন বৃত্তান্ত থানায় জমা দিতে হবে।
এর প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ১৫ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, সমপ্রতি রাজধানীতে গৃহকর্মী সেজে প্রতারণার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মূলত অভিজাত এলাকাগুলোকে টার্গেট করে এসব প্রতারকচক্র তাদের কার্যক্রমের পরিকল্পনা করে। প্রতারকরা বিভিন্ন গ্রুপে বাসা ও মেসে কাজ করার নামে সুযোগ বুঝে কৌশলে টাকা-পায়সা, মোবাইল ফোন, ঘড়ি, স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি চুরি করে এবং মারামারিসহ বাসার বাসিন্দাদের অজ্ঞান বা হত্যা করে মালামাল নিয়ে চম্পট দেয়। সমপ্রতি সোনার দাম বাড়ার পর বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার বা মূল্যবান মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে গৃহপরিচারিকাদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারক।
রায়ে তিনি বলেছেন, এসব প্রতারকচক্রে কয়েকজন সদস্য এবং একজন দলনেতা থাকে। দলনেতা প্রত্যেক সদস্যকে বাসা নির্দিষ্ট করে দেন। প্রতারণা করে পাওয়া জিনিসপত্র বিক্রির টাকার একটি অংশ দলনেতাকে দিতে হয়। বাসার সদস্যদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ফেলে বা শ্বাসরোধে হত্যা করে এসব প্রতারক চক্র। বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী সরবরাহ করার নামেও প্রতারণা করে চলেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। নাম সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়েও রাজধানীবাসী হয়রানির শিকার হচ্ছে। দারোয়ানের বা অন্যান্য লোকজনের চোখ এড়িয়ে ময়লার বালতি বা ব্যাগে ভরে অথবা বোরকা পড়ে বাসার মূল্যবান মোবাইল ফোন, বা অলঙ্কার বা নগদ টাকা-পয়সাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।