নগরীর ২৩নং উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে একটি ভবনের ছাদে অস্ত্র কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। মূলত গুলির শব্দ শুনে তার উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানাটির সন্ধান মিলে। এ সময় মেহেরুন্নেছা মুক্তা (৩৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ‘অস্ত্র কারখানার’ মালিক মোহাম্মদ নিজাম খানের স্ত্রী। মূলত এই কারখানায় পাইপগানের মত অস্ত্র তৈরি করা হতো বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক আজাদীকে বলেন, সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে স্থানীয় দুই ব্যক্তির মধ্যে বিরোধের জেরে একজন আরেকজনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। পরে গুলি বর্ষণকারীর বাসার ছাদে তল্লাশি করে অস্ত্র কারখানার সন্ধান মেলে। সেখান থেকে দুইটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি এয়ার গান, অস্ত্র তৈরির ডায়াগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের লোহা কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি গভীর রাতে নগরীর ২৩নং উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের বংশাল পাড়া এলাকায় গফুর খান সওদাগরের বাড়ির ছাদ থেকে এসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিজামের অপরাধের ধরন দেখে মনে হচ্ছে সে পেশাদার অপরাধী। নিজে বাসায় অস্ত্র তৈরি করে বিক্রি করত। তাকে ধরা গেলে জানা যাবে কাদের কাছে এসব অস্ত্র বিক্রি করত।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত নিজাম খান ভোটের ফলাফল নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শাহ আলম নামে এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে এ ঘটনার উৎপত্তি হয়। তবে গুলি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুই তলা ভবনটি নিজাম খানের পৈত্রিক বাড়ি। তাদের বাড়ির ছাদে কবুতর পালনের একটি ঘর আছে। সেখানেই অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন নিজাম।
শাহ আলম বলেন, বুধবার সিটি নির্বাচনের দিন নিজাম তাকে হুমকি দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বংশালপাড়া এলাকায় নিজাম হত্যার উদ্দেশ্যে শাহ আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শাহ আলম প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনায় নিজাম খান, তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা এবং অপর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শাহ আলম।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে জানান, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে বংশালপাড়ায় গোলাগুলি হচ্ছে বলে জানানো হয়। এরপর আমরা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলি। নিজামের বাড়িটিকে চিহ্নিত করে সেখানে তল্লাশি শুরু করি। এক পর্যায়ে বাসার ছাদে কবুতরের খাঁচায় অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ওই কারখানা থেকে ছোট অস্ত্র তৈরির কাগজের কিছু নকশাও পাওয়া গেছে। যেগুলো দেখে নিজাম অস্ত্র তৈরি করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গুলির শব্দ শুনি আমরাও। নিজাম সরকার দলীয় মনোনীত চসিক ২৩ নং উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তথা নির্বাচিত কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের অনুসারী। ভোটে প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করতে নিজাম তার বাসার ছাদে অস্থায়ী কারখানাটি গড়ে তুলেছিলেন। শাহ আলম অন্য প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন। ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরবর্তীতে নিজাম শাহ আলমকে হত্যার চেষ্টা করেন। গুলির শব্দে এলাকার মানুষ যখন বেরিয়ে আসে তখন নিজাম পালিয়ে যায়।
অস্ত্র কারখানা থেকে উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দুইটি পাইপ গান, একটি এয়ার গান, ১টি ওয়েল্ডিং মেশিন, ১টি গ্র্যান্ডিং মেশিন, ১টি ওয়েল্ডিং হোল্ডার, ১টি আরথিং ক্যাবল, ১ টি বিদেশী কাটার, ১টি রিপিট গান মেশিন, ৭টি এসএস পাইপ, ১টি এসএস বক্স পাইপ, ১টি স্টিলের তৈরি দুই নলা ব্যারেল, ১টি প্লাস্টিকের তৈরি সবুজ রংয়ের অস্ত্র সাদৃশ্য বস্তু, ১টি লোহার ছেনি, ১ টি কাঠের হাতলযুক্ত বাটাল, ২ টি হাতুড়ি, ১ টি স্প্রিং প্লায়ার্স, ১ টি নোজ প্লাস, ১ টি স্প্রিং তৈরির প্লায়ার্স, ১ টি লোহার তৈরি পাইপ রেঞ্চ, ১১টি বিভিন্ন সাইজের লোহার পাইপ, ১টি ড্রিল মেশিন, ১টি স্টিলের গ্রিপ প্লায়ার্স, ২টি করাত, ১৮টি বিভিন্ন সাইজের স্প্রিং, ২টি সাদা রংয়ের কাগজের তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের নকশা এবং ১ টি প্লাস্টিকের বাটযুক্ত ছোরা।