দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজ ধানের আবাদ। মৃদু হাওয়ায় তাতে বয়ে যাচ্ছে সবুজের ঢেউ। চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে এই দৃশ্য দেখা গেছে। এই বিলে এবার ১০ হাজার কৃষক আমন আবাদ করেছেন। গত আড়াই মাস আগে বপণ করা চারাগুলো এখন পরিপুষ্ট। এতে বিলজুড়ে এখন সবুজ আর সবুজ। যেন মাঠজুড়ে সবুজ গালিচা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। মৃদু হাওয়ায় সবুজ চারার নৃত্য গুমাই বিলের কৃষকের বুকে ভাল ফলনের আশা জাগিয়ে তুলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আমন মৌসুমে এবার ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। উপজেলার কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে গুমাইবিলের ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে এবার আমন রোপণ করা হয়েছে। এবার বিলে ব্রীধান–৪৯, ৫১, ৫২, ৭৫, ১০৩, কাটারী, সাদা পাইজামসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের আমন আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই থোড় বের হচ্ছে। আর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে কাটার উপযুক্ত হবে। তবে স্বল্প মেয়াদি ধান যেমন ব্রিধান ৭৫, ১০৩ এবং হাইব্রিড জাতগুলো আগামী ২০ দিন পর কাটা যাবে। গেল মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫.৮ মেট্রিক টন ধান এবং চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩.৮ মেট্রিক টন। বাজারে ধান ও চালের ভাল দাম পাওয়াতে এবার আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আবাদ হয়েছে বলে জানা যায়।
গুমাইবিলের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ১২০ কানি (সাড়ে ২০ হেক্টর) জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ধান আবাদ থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত তার কানি প্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। এবার শ্রমিকের মজুরী ও খাওয়ানোর পর ৮০০–১০০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। ভালো ফলন হলে লাভের মুখ দেখবেন বলে তিনি জানান।
সিরাজুল ইসলাম নামে অপর একজন কৃষক জানান, এবার ৪৫ কানি জমিতে তিনি আমন আবাদ করেছেন। গত বোরো মৌসুমে ভালো ফলন পেয়েছেন। গুমাইবিলের আরেক কৃষক মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, এবার ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেছি। হেক্টর প্রতি ইতোমধ্যে ৫৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন পাওয়া পর্যন্ত হেক্টর প্রতি গড়ে ৯০ হাজার টাকা করে খরচ হতে পারে। মাঠে চারাগুলো এখন পরিপুষ্ট। তাই সবুজে সবুজে ভরে ওঠেছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না করলে এ বছর ভালো ফলন পাব।
গুমাইবিলে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, প্রায় প্রতি বছরই গুমাই বিলে আমন মৌসুমে আমন ধানের ক্ষতি হত বন্যায় কিন্তু এবার এখনও পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। তাছাড়া এবার আমাদের মনিটরিং ছিল খুব বেশী। কোনো ধরনের বালাই আমন ফসলে ক্ষতি করতে পারেনি এবং কৃষকরাও এখন কৃষি বিষয়ক অনেক তথ্য আমাদের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং কৃষি ভিত্তিক এ্যাপস থেকে জানতে পারেন। তাছাড়া ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য আমন ধানের জমিতে আমরা ১০০% পার্সিং করেছি অর্থাৎ গাছের খুঁটি পুতে দিয়েছি জমিতে, এতে বিভিন্ন ধরনের পাখিরা ধানের ক্ষতিকর পোকার মথ খেয়ে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশেই কমিয়ে আনছে। তাছাড়া সুষম সার, লাইনে রোপন, সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যার কারনে আমন ধানের ফলন বাম্পার হবে বলে আশা করছি। এবার আমরা আমাদের অফিসিয়াল নির্দেশনায় প্রতি সোমবার সন্ধ্যায় আলোক ফাঁদ স্থাপন করছি প্রতিটি ব্লকেই। এতে ক্ষতিকর উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতির অনুপাতের ভিত্তিতে আমরা কৃষকদের বালাইনাশক ব্যবহারে সিদ্ধান্ত দিই। তাই অন্যান্য বারের তুলনায় এবার পরিবেশের ভারসাম্যও অনেকটা রক্ষা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, গুমাইবিলের আমন আবাদ খুব ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ে তদারকি, সময়মত কীটনাশক প্রয়োগ ও কীট দমনে প্রাকৃতিক পদ্ধতির ব্যবহার, কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম সর্বোপরি আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার আমনের ফলন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হবে। কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।৪












