সীতাকুণ্ড মন্দির সড়ক থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাদদেশ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পথ লোকে লোকারণ্য ছিল। শনিবার দিন–রাত তীর্থযাত্রীরা প্রায় ১২ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় ওঠেন। তাদের অভিযোগ, সরু পথ, ভাঙা সিঁড়ি, সড়কের পাশে অস্থায়ী দোকান স্থাপন, রাত্রিকালীন সড়কে বাতি না থাকা সব মিলে
তীর্থযাত্রীদের ভোগান্তির সীমা ছিল না। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তারক্ষী বা কোনও স্বেচ্ছাসেবক ছিল না। চন্দ্রনাথ শিব মন্দিরে দর্শন করতে গিয়ে দর্শনার্থীদের ভিড়ের চাপে গতকাল ১০জন তীর্থযাত্রী আহত হয়েছেন। এছাড়া মানুষের চাপাচাপিতে গত দুইদিনে অসুস্থ হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার
তীর্থযাত্রী। তীর্থযাত্রী সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, পাহাড় থেকে নামার সিঁড়ি ভেঙে দুজন মারা গেছেন, শনিবার মধ্যরাতে এমন গুজবের কথা ছড়িয়ে পড়লে পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পাহাড়ে ওঠানামার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আহত হন
দশজন। আহতরা হলেন– ফেনীর সুশান্তি রানি দাশ, সীতাকুণ্ডের শিল্পী সেন, নবীনগরের চমকা দেব, চাঁদপুরের কমল কর্মকার, মহেশখালীর মৃদুল কান্তি দে ও তার স্ত্রী অপর্ণা কান্তি দে, মানিকগঞ্জের ননী গোপাল, পরশুরামের অর্ণব সাহা ও অমিত এবং কুমিল্লার বড়ুরার বাসিন্দা সাবিত্রি।
তবে সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাশ বলেন, কোথাও সিঁড়ি ভাঙার খবর তাঁদের কাছে নেই। রাত আড়াইটার দিকে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়ার পর জটলা অসহনীয় হয়ে পড়ে। ফলে ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। ভোরে বিকল্প পথে তীর্থযাত্রীদের নামানোর কাজ করেছেন তাঁরা। এছাড়া ঠেলাঠেলিতে ওঠার পথে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেলাঙ্গনে দেখা যায়, চন্দ্রনাথধামে পোশাক পরিহিত বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবককে বাঁশি বাজিয়ে তীর্থ যাত্রীদের ভীড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করে সামনে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। এতে বৃদ্ধ ও অল্প বয়সী মহিলাসহ অনেক পুণ্যার্থী বিড়ম্বনার শিকার হন। এসময় স্বেচ্ছাসেবক দলকে ফিরে আসতে মেলা কমিটির মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা করা হলেও তা কর্ণপাত করেনি কেউ। এছাড়াও সরু পথ, ভাঙা সিঁড়ি এবং সড়কের পাশে অস্থায়ী দোকান স্থাপনের কারণে চন্দ্রনাথধামে উঠতে ভোগান্তির সীমা ছিল না আগত তীর্থযাত্রীদের।
চন্দ্রনাথ শিব মন্দির দর্শন করতে গিয়ে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে আগত তীর্থযাত্রী স্বপন সাহা চন্দ্রনাথধামে পাহাড় চূড়ার রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় বৃদ্ধ লোকদের নিয়ে উঠতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই অভিযোগ করেছেন তীর্থ করতে আসা ঢাকার করিম জুট মিলের প্রোডাকশন ম্যানেজার রতি কান্তি দাস। তিনি বলেন, ১০বছর ধরে তীর্থ করতে আসছি মন্দিরগুলোর কোনও পরিবর্তন হয়নি।
ফেনী থেকে পরিবার নিয়ে আসা তীর্থযাত্রী হরিশংকর ঘোষ জানান, বৃদ্ধা মাকে নিয়ে চন্দ্রনাথ পাদদেশ থেকে প্রায় ১২শ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠবেন শিব দর্শন করতে। মেলায় ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যেও পকেটমারের খপ্পরে পড়ে তীর্থযাত্রীরা প্রায় শতাধিক মোবাইল ও নগদ অর্থ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেলা চলাকালে পুলিশ এবং মেলা কমিটির সদস্যদের ব্যাপক সতর্ক অবস্থানের মধ্যেও বন্ধ হয়নি ছিনতাই। মেলায় পার্কিং স্থানে প্রতি তীর্থযাত্রীর পরিবহন থেকে টোল আদায় নির্ধারণ করা হলেও পৌরসভা এবং মেলা কমিটির সঠিক তদারকির অভাবে গাড়ি প্রতি অধিকহারে টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তীর্থযাত্রীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, পাঁচজন গুরুতর আহত পূণ্যার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া মেলা এলাকায় তাঁদের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৭০০জন। মেলা এলাকায় বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, জন্মাষ্টমী পরিষদ, হিন্দু মহাজোটসহ কয়েকটি সংস্থা। তারাও ৭০০ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ জানান, এত মানুষের চাপ আগে কখনো হয়নি। পাহাড় থেকে নামার পথে খাঁড়া সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে তাঁরা নামার পথ বন্ধ করে দেন। পরে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক হয়ে বিকল্প পথে পুণ্যার্থীদের নামিয়ে আনা হয়।