গায়ে পরাজয়ের আঁচড়ই লাগতে দিল না আবাহনী

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের শিরোপাটা আবাহনী জিতে নিয়েছিল তিন ম্যাচ হাতে রেখেই। বলা যায় সে দিনই লিগের উত্তেজনা শেষ হয়ে যায়। কারণ আবাহনী যে তখন সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারপরও আবাহনীর যুদ্ধ যেন শেষ হচ্ছিল না। আর সে যুদ্ধ ছিল একরকম নিজেদের বিপক্ষে। কিভাবে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া যায়। আর নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার সে লড়াইয়ে দারুণভাবে জিতেছে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। আগের আসরেও এক ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা নিশ্চিত করেছিল আবাহনী। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসে হারের স্বাদ নিতে হয়েছিল। তবে এবারে সে পথে আর হাটেনি চ্যাম্পিয়নরা। পরাজয়ের কোন আচড় গায়েই লাগতে দেয়নি চ্যাম্পিয়নরা। একেবারে অজেয় থেকে শিরোপা উৎসবটাকে দ্বিগুন করেছে আবাহনী। তিন ম্যাচ আগে শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর একবার উদযাপন করেছিল আবাহনী। আর গতকাল টানা ১১ ম্যাচে অজেয় থেকে আরো একবার ট্রফি হাতে শিরোপা উৎসব করল আবাহনী। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতা আবাহনীর সামনে লক্ষ্য এখন হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতা। পরের মৌসুমে নিশ্চয়ই সে লক্ষ্যেই দল গঠন করবে আবাহনী। চট্টগ্রামের ক্রিকেটে বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগে দীর্ঘ দিন পর কোন দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো। সবশেষ কবে এই কৃতিত্ব গড়েছিল কোন দল সেটা অবশ্য জানা যায়নি। তবে আবাহনী যেন নতুন করে আবার সে ইতিহাসটা লিখল।

লিগ শিরোপা নিশ্চিত হলেও আবাহনী তাদের পরের ম্যাচ গুলোতেও কোন ধরনের হালকা ভাব দেখায়নি। প্রতিটা ম্যাচেই সেরা দল নিয়ে মাঠে নেমেছে। গতকাল ছিল লিগের শেষ ম্যাচ। আর সে ম্যাচে আবাহনীর প্রতিপক্ষ ছিল আগের আসরের রানার্স আপ পাইরেটস অব চিটাগাং। যদিও এবারের লিগে একেবারেই ছন্নছাড়া এক দল পাইরটেস। তাই অনুমেয় ভাবেই ফেবারিট হয়েই গতকাল মাঠে নেমেছিল চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। আর ম্যাচটা জিতেছে তারা ঠিক ফেবারিটের মতই। বলা যায় প্রতিপক্ষকে একরকম উড়িয়েই দিয়েছে আবাহনী। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পাইরেটস অব চিটাগাংকে ৯৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারের লজ্জা উপহার দিয়েছে আবাহনী। গতকালের ম্যাচেও আবাহনী তাদের পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল। টসে জিতে সে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নামা আবাহনীর ব্যাটাররা কেমন যেন রানের জন্য লড়াই করছিল। ২৪ রানের মাথায় ১৩ রান করা সানজু ফিরেন প্রথম উইকেট হিসেবে। এরপর সব ব্যাটাররাই দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছে। কিন্তু বড় স্কোর খেলতে পারেনি কেউই। এমনকি বড় কোন জুটিও গড়ে তুলতে পারেনি। তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ২০৪ রান করে আবাহনী। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন ইমরান। জাতীয় ক্রিকেটার মোসাদ্দেক সৈকত করেন ৩১ বলে ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৩৪ রান। এছাড়া তাজুল ১৭, সাইফ ১৯, শোয়েব ২৫, তৌহিদ ১০, জীবন ১৩ এবং মহিউদ্দিন করেন ১৪ রান। পাইরটেস অব চিটাগাং এর পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মহিউল ইসলাম এবং আবু বক্কর। ২টি উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ রুবেল।

২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা পাইরেটস অব চিটাগাংকে বলতে গেলে একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন আবাহনীর তরুণ স্পিনার শোয়েব চৌধুরী। বলা যায় ম্যাচের সবাইকে টপকে নায়ক বনে গেছেন এই শোয়েব। এবারের প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর আগে রাইজিং স্টার ক্লাবের সাদ্দাম হোসেন ইনিংসে ৬ উইকেট নিলেও গতকাল তাকে টপকে গেছেন শোয়েব। মূলত তারই ঘূর্ণির মুখে পড়ে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যেতে থাকে পাইরেটস অব চিটাগাং এর ব্যাটিং লাইন। ইনিংসের শুরুতেই দলের খাতায় ৪ রান যোগ হতেই পাইরেটস হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। এরপর শুরু হয় শোয়েবের ভেল্কি। তার ঘূর্ণির সামনে আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি পাইরেটসের ব্যাটাররা। ফলে একের পর এক সবাই ফিরতে থাকে সাজঘরে। এক সময় মনে হচ্ছিল শতরান পার করতে পারবে না পাইরেটস। যদিও শেষ পর্যন্ত ১০৭ রানে অল আউট হয় গত আসরের রানার্স আপরা। দলের পক্ষে তিনজন মাত্র ব্যাটার দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছে। তারা হলেন ৪৮ রান করা রুবেল, ২৯ রান করা আবু বক্কর এবং ১৫ রান করা রাফিউল। আবাহনীর পক্ষে শোয়েব চৌধুরী ৬.১ ওভার বল করে একটি মেডেন সহ ১৯ রান খরচায় তুলে নেন ৬টি উইকেট। এর ফলে ১৩.৫ ওভার বাকি থাকতে জয় তুলে নেয় আবাহনী। দলটির পক্ষে ২টি উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত। চ্যাম্পিয়ন আবাহনী একেবারে বর্ণিল একটি মৌসুম কাটিয়েছে। এখন আগামী সৌসুমে হ্যাটট্রিক শিরোপার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করবে দলটি সেটা নিশ্চিত করে বলাই যায়।

গতকাল লিগের শেষ দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও সিজেকেএস সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর জেনারেল ম্যানেজার (টি ট্রেড) শাহ মঈনুদ্দিন হাসান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) চট্টগ্রাম, সিজেকেএস সহসভাপতি ও ক্রিকেট কমিটির চেয়রম্যান রাকিব হাসানের সভাপতিত্বে এবং সিজেকেএস নির্বাহী সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লবের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিজেকেএস নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ক্রিকেট সম্পাদক এ.কে.এম. আবদুল হান্নান আকবর। উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস, সিজেকেএস সহ সভাপতি এ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, মো. হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, যুগ্মসম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও মো. মশিউর রহমান চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য আবুল হাসেম, সৈয়দ আবুল বশর, ... ওয়াহিদ দুলাল, গোলাম মহিউদ্দীন হাসান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মো. দিদারুল আলম, সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শওকত হোসাইন, সিজেকেএস কাউন্সিলর এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, আলী হাসান রাজু, সুলতান মাহমুদ খান শাহীন, মো. সাইফুল্লাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরওয়ার আলম চৌধুরী (মনি) প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমসিসির আজীবন সদস্য হলেন মাশরাফি
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে ১৯.৬৭ লাখ শেয়ার হাতবদল