অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে পূর্বের ন্যায় মাইলেজ পদ্ধতি বহাল রাখার দাবিতে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন সারা দেশের ট্রেন চালক (লোকোমাস্টার), গার্ড ও টিটিইরা। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে মাইলেজ পদ্ধতি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন না হলে ২৬ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে কোনো চালক ৮ ঘণ্টার বেশি ট্রেন চালাবেন না বলে আলটিমেটাম দিয়েছেন। ট্রেন চালকসহ গার্ড ও টিটিইদের দাবিসমূহ হচ্ছে, মাইলেজ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, রানিং কর্মচারীদের মাইলেজ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করা, মাইলেজ কোড বাতিল করে ‘পার্ট অব পে’ হিসেবে ন্যায্য বেতনের কোড থেকে মাইলেজ দেওয়া। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান ভুইয়া আজাদীকে বলেন, মাইলেজ সিস্টেম নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার জন্য আমরা রেলমন্ত্রী, রেল সচিব এবং ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ তারিখের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণায়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বাতিল করে পূর্বের ন্যায় বেতনসহ মাইলেজ পদ্ধতি যেন চালু থাকে। অন্যথায় ২৬ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশের রেলওয়ের রানিং স্টাফরা ৮ ঘণ্টার বেশি ট্রেন চালাবে না। আমরা যদি ন্যায্য পাওনা না পাই তাহলে বাড়তি চালাব কেন?
তিনি বলেন, এই ব্যাপারে ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সারা দেশ থেকে সকলে গিয়েছিলেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তসহ বিস্তারিত ১৯ ডিসেম্বর রেলমন্ত্রী, রেল সচিব, ডিজিসহ সকলকে লিখিত আকারে দেব।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকজন লোকোমাস্টারের সঙ্গে কথা হয়। তারা আজাদীকে জানান, মাইলেজ হলো ‘পার্ট অব পে’। কাজ করলে পাই, না করলে পাই না। এটি ব্রিটিশ আমল থেকে চালু আছে। রানিং স্টাফদের প্রতি ৮ ঘণ্টা কাজ করার পর ১ দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ যে অর্থ প্রদান করা হয় তাই মাইলেজ। দেড়শ বছরের পুরনো পদ্ধতি। ১৮৬২ সাল থেকে এ সুবিধা দিয়ে আসছিল রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকাররা। বর্তমানে ট্রেন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে এসব রানিং স্টাফকে দৈনিক নির্ধারিত ১২ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। একজন লোকোমাস্টারকে ডিউটি শেষ করার পরও সবসময় অতিরিক্ত ডিউটির জন্য তৈরি থাকতে হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ফোন পাওয়া মাত্রই কাজে যোগ দিতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঈদ ও পূজার ছুটির সময় লোকোমাস্টারকে ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। তাদের কোনো ছুটি নেই। সেই বিবেচনায় লোকোমাস্টাররা ব্রিটিশ আমল থেকে মাইলেজ পান।
কিন্তু ১ জুলাই থেকে রেলওয়েতে ডিজিটাল সিস্টেম আইবাস প্লাস প্লাস পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা পরিশোধের নিয়ম চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, গার্ড ও টিটিইরা মাসে ৬ থেকে ৮ হাজার মাইল ট্রেন চালালেও ৩ হাজার মাইলের বেশি ভাতার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যার কারণে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ডিজিটাল সিস্টেমে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী প্রতি মাসে ৩ হাজার মাইল ট্রেন চালানোর ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই জটিলতার কারণে আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫শ ট্রেনচালক, সহকারী চালাক, গার্ড ও টিটিই।
জানা গেছে, রেলওয়ের সংস্থাপন কোডের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাফিক রানিং স্টাফ ও লোকোমোটিভ রানিং স্টাফদের ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ভিত্তিতে রানিং অ্যালাউন্স দেওয়ার প্রস্তাব হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানিং স্টাফদের বিশেষ এ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেন। কিন্তু সম্প্রতি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভাতা সীমিত হয়ে যাওয়ার ঘোষণা মানছেন না রানিং স্টাফরা।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান ভুইয়া বলেন, রেলওয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রানিং স্টাফরা মাইলেজ পাচ্ছেন। রেলওয়ে অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছেন তারা। হঠাৎ করে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেখানে আমাদের বেতন-ভাতা সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ম বহাল থাকলে নির্ধারিত সময়ের পর আমরা আর ট্রেন চালাব না। এতে বিঘ্ন হতে পারে রেলের স্বাভাবিক চলাচল।