কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার পাটুয়ারটেক এলাকায় ‘আত্মসমর্পণ করে সাজা ভোগকারী’ গডফাদারসহ চার মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের ব্যবহৃত বিলাসবহুল পাজেরো গাড়ি থেকে সাত লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার সকলে পরস্পর নিকটাত্মীয় এবং সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্রের সদস্য। গতকাল সোমবার দুপুরে র্যাব–১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ব্যাটালিয়নটির সহ–অধিনায়ক মেজর শরীফুল আহসান।
গ্রেপ্তারকৃত হলেন টেকনাফ পৌরসভার ডেইল পাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল আমিন (৪০), একই এলাকার মৃত দীল মোহাম্মদের ছেলে জাফর আলম (২৬), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিল এলাকার আবু ছৈয়দের ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৩৫) ও একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে নুরুল আবছার (২৮)। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আব্দুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত মাদক কারবারি। তিনি গত ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে সাজাভোগ শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি ইয়াবার বড় একটি চক্র নিয়ন্ত্রণ করেন। তার বিরুদ্ধে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ একজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তিনি আব্দুল আমিনের ভাগিনা। তার বিরুদ্ধে ২টি মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার নুরুল আবছার অপর আসামি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ভগ্নিপতি। তার বিরুদ্ধেও মাদক আইনে একটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অপরজন জাফর আলম সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং বড় মাদকের চালান পাচারে তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব পালন করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে শরীফুল আহসান বলেন, মাদক সম্রাট আব্দুল আমিনের নেতৃত্বে তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিলাসবহুল পাজেরো যোগে মাদকের বড় একটি চালান টেকনাফ থেকে কক্সবাজার শহরের দিকে পাচারের খবর পায় র্যাব। এ তথ্যের ভিত্তিতে রোববার দিবাগত রাতে র্যাবের একটি দল মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাটুয়ারটেক এলাকায় অস্থায়ী তল্লাশি চৌকি স্থাপন করে। এক পর্যায়ে রাত সোয়া ২টার দিকে টেকনাফ থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টিকার লাগানো বিলাশ বহুল একটি পাজেরো সেখানে পৌঁছালে থামার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গাড়িতে থাকা লোকজন না থেমে দ্রুত চালিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে তাদের থামাতে সক্ষম হয় র্যাব। এ সময় গাড়ির পেছনের সিটের নিচে বিশেষ কায়দায় রাখা দুইটি বড় বস্তার ভিতরে পাওয়া যায় ৭ লাখ ইয়াবা। জব্দ করা হয় ইয়াবা পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটিও। এসব ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকারও বেশি।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দিয়েছে–মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অবস্থানকারি সিরাজের মাধ্যমে আব্দুল আমিনের নেতৃত্বের সিন্ডিকেটের সদস্যরা বড় বড় মাদকের চালান নিয়ে আসতো। সীমান্তে সাগর ও নদী পথে মাদকের এসব চালান টেকনাফে এনে নিজেদের হেফাজতে মজুদ রাখতো। পরে কক্সবাজার শহরে আনার পর সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে উখিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।