গাজীপুর ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় ছাত্র–জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছে। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাজাও পড়া হয়। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় নগরের জামালখান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদ ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ’ শিরোনামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সমাবেশের আয়োজন করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরের ষোলশহর এলাকায় ‘গাজীপুরে ছাত্র–জনতার ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল’ শিরোনামে কর্মসূচি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশে গাজীপুর ও হাতিয়ায় ছাত্র–জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। পালিয়ে যাওয়ার পরও তারা ভারতে বসে ছাত্রদের ওপর গুম–খুন ও হামলার নির্দেশ দিচ্ছে। ছাত্রদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট করতে হবে। তারা বলেন, ছয় মাস পরও আওয়ামী লীগের বিচারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। ছাত্র–জনতার জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা পুনরায় ছাড়া পাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যেন তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনেন। যতক্ষণ তাদের বিচার কার্যকর না হয় ততক্ষণ আমরা রাজপথে থাকব। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী হামলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। গত পরশুদিন আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পরদিন গাজীপুরে আমাদের ভাইদের ওপর আবারও হামলা করেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ভাইয়েরা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আওয়ামী লীগের এই ধৃষ্টতা অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে হয়েছে। এ সরকারের আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কিছুই করতে পারেনি। আমরা গত ছয় মাসে আমাদের পক্ষ থেকে বারবার তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু নীরবতা পালনকারী এই অন্তর্বর্তী সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
রাসেল আহমেদ বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামের মাটিতে ঝটিকা মিছিল করছে। তাদের ষড়যন্ত্রের পেছনে পুলিশ প্রশাসনের অনেকের জড়িত থাকার আশঙ্কা করছি। এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাবেশ শেষে তারা একটি মিছিল বের করে আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
এদিন সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে নগরের ষোলশহরের স্টেশন থেকে মশাল মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ২ নম্বর গেটসহ আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবেন বলে ঘোষণা দেন। আন্দোলনে অংশ নিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এ আন্দোলন দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারকে নির্মূল করার জন্য। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের গুপ্ত সন্ত্রাসীরা অনেকেই দেশে রয়ে গেছে। তারা গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে। কোন সাহসে এখনো তারা আমাদের ভাইদের উপর হামলা চালায়। আমরা প্রশাসন থেকে সেটার জবাব চাই। স্বরাষ্ট উপদেষ্টা থেকে সেটার জবাব চাই। আমরা অতিদ্রুত এসব হামলার বিচার দাবি করছি। দেশ থেকে স্বৈরাচার নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।