নারায়ণগঞ্জের গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাট চালানোর পর দেওয়া আগুন প্রায় ২২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রোববার রাত ৯টার দিকে রূপগঞ্জের তারাবো রূপসী এলাকায় সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন ওই কারখানায় আগুন লাগার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের এক ডজন ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানা ভবনের সামনে সাংবাদিকদের দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি। পুরোপুরি না নেভা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম চলবে।’ খবর বিডিনিউজের। এর আগে বিডিনিউজের খবরে বলা হয়েছিল, আগুন লাগার পর থেকে অন্তত ১৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তালিকা তৈরি করার কথাও বলা হয়। সন্ধ্যার ব্রিফিংয়ে সময় সময় নিখোঁজদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভিকটিম লিস্ট তৈরির দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের। আগুন নির্বাপণ করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। ভিকটিম লিস্টের দিকে আমাদের নজর নেই। আমরা সকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। তাদের স্বজনদের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছি।’ কারখানার প্রধান ফটকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তালিকা করছিলেন–সাংবাদিকরা এ তথ্য জানালে পরিচালক বলেন, ‘সে ব্যাপারে কোনো তথ্য আমার জানা নেই। কেউ তালিকা করে থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। কেননা আমিও কিছুটা ডাউটের (সন্দেহ) মধ্যে পড়ে গেছি যে (তালিকা করার) এ তথ্যটা আপনাদের কে দিল। আমরা তো কখনও কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো তালিকা করি না।’
রোববার ভোরে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। তার গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে বিকালে একদল লোক গাজীর টায়ার প্রস্তুতকারী কারখানাটিতে হামলা চালায় এবং লুটপাট শুরু করে। এর আগে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক দফায় গাজীর রূপসী ও কর্ণগোপের দুটি কারখানায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘খবর পেয়ে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। এটি একটি টায়ার তৈরির ফ্যাক্টরি। আগুনটা পুরো ফ্যাক্টরিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া টায়ার, টায়ার তৈরির কাঁচামাল রাবার, প্লাস্টিক জাতীয় দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’
গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানাটিতে লুটপাট চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম।
গাজী গ্রুপের এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘রোববার বিকালে দুটি দলে কয়েকশ লোক কারখানায় ঢুকে পড়ে। আমাদের কর্মীদের সক্ষমতা অনুযায়ী তাদের বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। লুটপাটের পর রাত ৯টার দিকে কারখানার একাধিক ভবনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ছয়তলা একটি ভবনের নিচে যখন আগুন দেওয়া হয় তখন লুটপাটকারীদের কয়েকজন ভবনটির উপরে ছিল। এখন কয়েকজন দাবি করছেন, তাদের স্বজনরা ভবনে আটকা পড়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রেজাউল বলেন, ‘ভবনে আটকে পড়া ১৪ জনকে আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। তারা এ কারখানার কর্মী নন, মূলত কারখানাটির মালামাল সরিয়ে নিতে তারা এসেছিলেন। আরও কেউ ভবনের ভেতরে আছে কিনা তা আগুন নেভানোর আগে বলা যাচ্ছে না।’