গাজায় যুদ্ধবিরতি আজ থেকে

৩৩ জিম্মির বিনিময়ে ১,৯৭৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল

| রবিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি আজ রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। মুখপাত্র মাজেদ আলআনসারি টুইটে বলেন, পক্ষগুলোর মধ্যে হওয়া চুক্তি মোতাবেক রোববার (আজ) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায়) গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। আমরা আমাদের ভাইদেরকে সাবধান থাকতে, সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রদর্শন ও সরকারি সূত্রগুলো থেকে নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে পরামর্শ দিচ্ছি। সোয়া এক বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনে যে কয়েকটি দেশ মধ্যস্থতা করেছিল, কাতার তাদের অন্যতম। খবর বিডিনিউজের।

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা শুক্রবার ছয় ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে গভীর রাতে চুক্তিটি অনুমোদন করে। চুক্তি অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপেই হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, তার বিনিময়ে ইসরায়েলও তাদের জেলে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীতে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও ছাড়তে হবে, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। এই সময়ে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে তেল আবিব।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এই ধাপেই মুক্তি পাবে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারা। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন, যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর।

তবে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী না হলে এবং ইসরায়েলি বাহিনী গাজা না ছাড়লে তারা প্রথম ধাপের পর আর কোনো জিম্মিকে ছাড়বে না। চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, প্রথম ধাপে যে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের মধ্যে বেসামরিক নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত বেসামরিকরা রয়েছেন।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন আজ রোববারই তিন জিম্মির মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী, পরবর্তী ছয় সপ্তাহে নিয়মিত বিরতিতে এরকম ছোট ছোট দলে বাকিরাও মুক্তি পাবে।

৩৩ জিম্মির বিনিময়ে ১৯৭৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি : এদিকে বাংলানিউজ জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৯৭৭ জনকে ছেড়ে দেবে নেতানিয়াহু প্রশাসন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথের বরাতে গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

গতকাল ভোরে ইসরায়েলের বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সরকার জিম্মি ফেরত পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে কার্যকর হচ্ছে এই পরিকল্পনা। যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন রোববার দেশটির বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এদের মধ্যে ৬৯ জন নারী, ১৬ জন পুরুষ এবং ১০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ৯৫ জনের নামও প্রকাশ করেছে বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

চুক্তির শর্ত অনুসারে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের স্থায়ীত্ব হবে অন্তত ৪২ দিন, তবে প্রয়োজনে এই মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।

যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি তিন পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে যে ৩৩ জনকে মুক্তি দেবে হামাস, তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। অন্যদিকে, যে ১ হাজার ৯৭৭ জন ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেবে, তাদের মধ্যে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আছেন ২৯০ জন এবং অন্যান্য অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাবাসের সাজাপ্রাপ্ত রয়েছেন ১ হাজার ৬৮৭ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

চুক্তির শর্ত অনুসারে, আগামী ৬ সপ্তাহে সাত দফায় মুক্তি দেওয়া হবে এই ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মি এবং ১ হাজার ৯৭৭ জন ফিলিস্তিনিকে।

উল্লেখ্য, হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে বর্তমানে ৬০ জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা ইসরায়েলের। অন্যদিকে অ্যাডভোকেসি সংস্থা প্যালেস্টাইনিয়ান কমিশন অব ডিটেইনি’জ অ্যাফেয়ার্সের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি আছেন প্রায় ১০ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে যাবজ্জীবন কারাগারে দণ্ডিত অন্তত ৬০০ জন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলায় এক হাজার ২০০ নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার প্রত্যুত্তরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্নে সামরিক অভিযানে নামে। এরপর ১৫ মাসের অবিরাম যুদ্ধ গাজার প্রায় ৪৭ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য বলছে। প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দাকে হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত। নিয়মিত ত্রাণ না পৌঁছানোয় সেখানে খাবার, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়েরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় এই সংঘাতের অবসানের জন্য শান্তি আলোচনা এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে আসছিল শুরু থেকেই। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআকবরশাহ’য় ৭ বসতঘর উচ্ছেদ, এক একর জায়গা উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ছাত্রত্ব বাতিল চায় ছাত্রদল