৬৬ জন বেইত লাহিয়ার একটি হাসপাতালের কাছাকাছি এবং ২২ গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বেইত লাহিয়া ও শেখ রাদওয়ান এলাকায় দুই দফা হামলায় ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ জন বেইত লাহিয়া এলাকার কমাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছাকাছি এবং ২২ জন গাজা সিটিতে নিহত হন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা। খবর বিডিনিউজের।
গাজার উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, বেইত লাহিয়া ও গাজা সিটির অন্তত পাঁচটি ভবনে ইসরায়েলি বোমা হামলার পর বৃহস্পতিবার ভোরে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। হামাস সমর্থিত গণমাধ্যম বলছে, এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে নারী ও শিশুসহ অনেকে চাপা পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সমপ্রতি তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলা জোরদার করে বলেছে, তারা হামাসকে পুনরায় সংগঠিত হতে বাধা দিচ্ছে। গাজার উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ ইসরায়েলিদের আওতায় রয়েছে। এই কারণে গত ৪০ দিনে কোনও মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি বলে এর আগে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘ।
এদিকে গাজার চিকিৎসকরা বলছেন, তারা আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, তারা ওই এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করতে পারছে না। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বেইত লাহিয়ার একটি পাঁচতলা আবাসিক ব্লকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা।
বার্তা সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলের স্থল অভিযানে গত পাঁচ সপ্তাহে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, বেইত লাহিয়া, জাবালিয়া ও বেইত হানুন শহরের ৭৫ হাজার মানুষ পানি ও খাদ্য সংকটে ভুগছে।
গত সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী উল্লেখ করে বলা হয়, গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের গণবাস্তুচ্যুতি ঘটিয়ে ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
জাতিসংঘের মতে, গাজার জনসংখ্যার ৯০% মানুষ গত এক বছরে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আর ৭৯% অঞ্চলটি ইসরায়েলের জারি করা উচ্ছেদ আদেশের আওতায় রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রায় ১২শ মানুষকে হত্যা করে। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও প্রায় ২৫১ জনকে। ওই দিন থেকে গাজায় তীব্র আকাশ হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরপর থেকে গত এক বছর ধরে গাজায় প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ নিহত ও এক লাখ চার হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাবনা আটকে দিয়েছে। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো দেশটি তার মিত্র ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব ভিটো দিল।
১৫ জন কাউন্সিল সদস্যের মধ্যে ১৪ জন খসড়াটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাদের দাবি, গাজার যুদ্ধ অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সমস্ত জিম্মিকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড বলেছেন, ওই নথিতে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির মধ্যে যোগসূত্র থাকার প্রয়োজনীয়তা অযৌক্তিক। উড বলেন, প্রস্তাবিত প্রস্তাবটি হামাসকে একটি বিপজ্জনক বার্তা দেবে।
পৃথক এক ঘটনায় মার্কিন মধ্যস্থতাকারী আমোস হোচস্টেইন বৈরুত থেকে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। তিনি বলেছেন, লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হলেই লেবাননে সংঘাত অবসানের সম্ভাবনা আছে।