গাজা থেকে ফিরে ট্রমার সঙ্গে যুদ্ধ আত্মাহুতি দিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা

| রবিবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

এক বছর আগে ইসরায়েলে হামাসের প্রাণঘাতী হামলার পর ৪০ বছর বয়সী এলিরান মিজরাহিকে পাঠানো হয়েছিল গাজায়, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই রিজার্ভ সদস্য দেশে ফেরেন এক ভিন্ন মানুষ হয়ে। তার পরিবার বলছে, গাজায় যুদ্ধে গিয়ে মিজরাহি যা দেখেছেন, তাতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। যুদ্ধে যাওয়ার ছয় মাস পর বাড়ি ফিরে তিনি পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগছিলেন। খবর বিডিনিউজের।

ফের যুদ্ধে পাঠানোর আগে তিনি আত্মাহুতির পথ বেছে নেন। তার মা জেনি মিজরাহি বলছিলেন, সে গাজা ছেড়ে ফিরে এসেছিল, কিন্তু গাজা তাকে ছাড়েনি। পোস্টট্রমার কারণে তার মৃত্যু হল। গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে এলিরান মিজরাহির মত মনোপীড়ায় আক্রান্ত ইসরায়েলি সৈন্যদের গল্প এক প্রতিবেদনে তুলে এনেছে সিএনএন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, যুদ্ধের সময় মানসিক আঘাতে পিটিএসডি বা মানসিক অসুস্থতায় ভোগা হাজার হাজার সেনা সদস্যকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে কতজন যুদ্ধের দহন থেকে মুক্তি পেতে এলিরান মিজরাহির মত আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, সেই সংখ্যা ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল একবছরে ইসরায়েলের হামলায় ৪২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যে হামলার পর ওই যুদ্ধের সূত্রপাত, সেই হামলায় ইসরায়েলের ১২০০ মানুষের প্রাণ যায়, জিম্মি করা হয় ২৫০ জনকে। ইহুদি রাষ্ট্রটি গঠনের পর থেকে আর কখনো নিজেদের পক্ষে এত প্রাণক্ষয় দেখতে হয়নি। গাজার যুদ্ধ এখন লেবাননেও ছড়িয়েছে। ইসরায়েলের অনেক সেনা সদস্য এখন ভয়ে আছেন, তাদের হয়ত আরেক যুদ্ধে ডাক পড়বে।

গাজায় চার মাস দায়িত্ব পালন করা আইডিএফের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএনএনকে বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই ভয়ে আছেন। তারা ভাবছেন, হয়ত তাদের লেবাননে যুদ্ধ করতে পাঠানো হবে। এই মুহূর্তে আমরা অনেকেই সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না।

কেবল আইডিএফের তত্ত্বাবধানে বিরল দুএকটি সফর ছাড়া বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় ঢুকতে দেয় না ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। সে কারণে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার পূর্ণাঙ্গ চিত্র বা সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের অভিজ্ঞতা জানা বেশ কঠিন।

গাজায় যুদ্ধ করা ইসরায়েলি সেনারা সিএনএনকে বলেছেন, তারা এমন ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন, যা বাইরের বিশ্ব কখনো অনুধাবন করতে পারবে না। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চিরকালীন যুদ্ধের ভয়ঙ্কর নির্মমতা আর তার জেরে ইসরায়েলি সৈন্যদের যে অদৃশ্য মাশুল গুনতে হচ্ছে, তা উঠে এসেছে তাদের কথায়।

অনেক সৈন্যের কাছে গাজার যুদ্ধ ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এবং যে কোনো উপায়ে সেটা জিততে হবে। কিন্তু লড়াইয়ে যে মানসিক মাশুলও গুনতে হচ্ছে, তা অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

এই যুদ্ধ যে ইসরায়েলি সমাজের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে, তা কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা, একজন চিকিৎসক এবং আত্মাহুতি দেওয়া রিজার্ভ সেনা মিজরাহির পরিবারের কথায় উঠে এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহার্টবিট নিয়ন্ত্রণ করবে পচনশীল ব্যাটারি?
পরবর্তী নিবন্ধইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা আরব রাষ্ট্রগুলোর