শীত চলেই এলো। আর সেই বার্তাই জানান দিচ্ছে প্রকৃতির অন্যতম সেরা উপহার খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি বসানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত গাছিরা। সারা বছর অযত্ন অবহেলায় থাকা খেজুর গাছের যত্ন আর পরিচর্যায় ব্যস্ত এখন গাছীরা। গাছগুলোর মরে যাওয়া বা ঝুলে যাওয়া ডালপালা ছেটে সেখানে বাটাল ও খুন্তি দিয়ে এখন রস ঘেমে পড়ার নির্ধারিত মুখমণ্ডলের স্থানটা মসৃণ করে হাঁড়ি ঝুলানোর স্থান ঠিকঠাক করে নিচ্ছে গাছীরা।
মীরসরাইয়ের দক্ষিণ জনপদ বালিয়াদি–বগাচতর এলাকায় প্রতি বছর শীতের এই মৌসুম এলেই ধানচালসহ অন্যান্য কাজ আগেভাগে সেরে বা কাজের রুটিন ভাগ করে প্রতি বছর ওরা খেজুর গাছ থেকেই জনপ্রতি আয় করে প্রায় লক্ষ টাকা। আবার মঘাদিয়া, সাহেরখালী করেরহাট, দুর্গাপুর, কাটাছরা ওমানপুর, ইছাখালী গ্রামসহ প্রতিটি গ্রামেই কিছু না কিছু গাছি আহরণ করে খেজুর রস।
বগাচতর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আলী আজম (৪২) বলেন, এবার ৫০টি গাছে হাঁড়ির প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছেন। প্রায় শত খেজুর গাছে হাঁড়ি বসাই প্রতি বছর। এবার গাছ ও কমে গেছে আর খাজনা দেয়ার টাকা ও বেশি হাতে নেই তাই বেড়িবাঁধের উপর কিছু খেজুরগাছ ছাড়া আর নেইনি কোন গাছ। গত বৃহস্পতিবার গাছগুলো মাত্র তৈরি করছিল হাঁড়ি বসানোর জন্য। গাছের মাথায় গাছের ছাল আর ঢালপালা ছেটে এখন থালি তৈরি করার সময়। আর কয়েকদিনের মধ্যেই রস নামতে শুরু করবে। প্রায় দুই মাস চলতে এই রসের মেলা। গাছি আলী আজম বলেন. প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ লিটার রস পাবে এই আশা। প্রতি বছর গ্রামে এসেই অনেকে রস নিয়ে যায়। আবার কখনো চট্টগ্রাম শহরে ও চালান করে থাকি। গেল বছর প্রতি লিটার রস ৪০ থেকে ৫০ টাকা থাকলেও এবার ১০টাকা বাড়াতে হবে। কারণ সবখানে খরচ বেড়ে গেছে।
মঘাদিয়া গ্রামের খেজুর গাছি রশিদুল ইসলাম (৫০) বলেন, প্রতি মৌসুমে খেজুরের রসে কিছু বাড়তি আয় হয় আমাদের। বছরের অন্যান্য সময় কি কাজ করেন জানতে চাইলে অপর গাছি মাহবুব আলম (৫২) বলেন, আমরা সাধারণত প্রান্তিক কৃষক। নিজের জমি আর বর্গা জমি চাষ করে থাকি। পাশাপাশি মৌসুমী সবজি, ধান, ইত্যাদি চাষাবাদ করি। খেজুর গাছে আমাদের বছরের মৌসুমী বাড়তি রোজগার। তবে আশংকার কথা হলো এই কৃষকদের সুদিন আবার দুর্দিনে রুপ নেয় কিনা। কারণ দিনে দিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। আবার অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং তা সম্প্রসারণের জন্য যেখানে একসময় কোনো যান্ত্রিকতাই ছিল না সেখানে বন ও খেজুুরের সারি সারি গাছ সবই হারিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। একসময় এই রসের হাঁড়ির প্রধান উৎসস্থল ছিল সেখানে এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে কলকারখানা। হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের ও অনেক মৌসুমী স্বপ্ন। এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন এখন থেকে গ্রামের অন্যান্য সড়কে ওরা খেজুর গাছ রোপন বৃদ্ধি করলে এই আশংকার দূর হতে পারে। সরকার ও এখন সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় আন্তরিক।