ডাকাত প্রতিরোধ অভিযানে গেলে কক্সবাজারে চকরিয়ায় আলোচিত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা এবং সরাসরি গলায় ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতকারী খুনি নাছির উদ্দিন ওরফে ডাকাত নাছিরকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছে অপর সহযোগী ডাকাত এনামুল হকও (৪৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও আরেক খুনি মো. সাদেককেও (২৮) গ্রেপ্তার করা হয় আগের দিন। এ নিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শনিবার ভোররাত পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে যৌথবাহিনীর এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
আভিযানিকদল সূত্র জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর যৌথবাহিনীর অভিযানকালে চৌকস সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ধাওয়া করে ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য নাছির উদ্দিনকে সশস্ত্র অবস্থায় ধরে ফেলে। নাছিরকে ছাড়িয়ে নিতে একাধিক সতীর্থ মিলে লেফটেন্যাট তানজিমের ওপর হামলা করলেও তিনি অত্যন্ত দক্ষতা, সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে তা প্রতিরোধ করেন এবং ডাকাত নাছিরকে জাপটে ধরে রাখেন। একপর্যায়ে ডাকাতেরা ধারালো ছুরি দিয়ে তার উপর হামলা করে। এ সময় ডাকাত নাছির সুযোগ বুঝে হাতে থাকা ছুরি তানজিমের গলায় ঢুকিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর খুনি নাছির উদ্দিন ও এনামুল হক সময়–সুযোগ বুঝে সমুদ্র পথে বিদেশ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এরই মধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত আভিযানিক দল রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
এ প্রসঙ্গে র্যাব–১৫ এর বান্দরবান ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চকরিয়া পৌরসভার কাহারিয়া ঘোনা এলাকায় নাছিরের ফুফু শাশুড়ির বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় দেখা যায় প্রযুক্তি সচেতন নাছির আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর সম্ভাব্য নজরদারি এড়াতে মোবাইল ফোন থেকে ব্যাটারি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এমনকি ধরা পড়ার পর ভুয়া নাম পরিচয় দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাও করেছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিমকে পরিকল্পিতভাবে এবং অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় খুনের কথা স্বীকার করে নাছির। উদ্দেশ্য ছিল আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর মনে ভয় ধরিয়ে দিয়ে চলমান অভিযানের গতি শ্লথ করে দেওয়া।
এদিকে গতকাল শনিবার আইএসপিআর জানায়, শহিদ লেফটেন্যান্ট তানজিম হত্যার ঘটনায় জড়িত এজাহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়াও চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মো. সাদেক নামের আরও এক আসামিকে। এ নিয়ে লেফটেন্যান্ট তানজিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় রুজুকৃত দুই মামলার এজাহারনামীয় ১৭ জনের মধ্যে ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের হেফাজত থেকে ৫টি দেশীয় বন্দুক, বিভিন্ন ধরনের ১৪ রাউন্ড গুলি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাত দলের অন্যান্য জড়িত সদস্যদের গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের চকরিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।