গমের বাজারে সংকটের শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে অস্থির হয়ে উঠছে গমের বাজার। বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ গম আমদানিকারক দেশ হিসেবে এই অস্থিরতা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার গমের ওপর বাংলাদেশের গমের বাজার নির্ভরশীল হয়ে ওঠায় নানা ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হওয়ারও আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ৭০ লাখ টনের মতো গমের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ৬০ লাখ টনের মতো গম আমদানি করতে হয়। গত বছর ৫৩ লাখ ৪২ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারিভাবে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার টন। বাকি গমের পুরোটাই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বেসরকারি আমদানিকারকেরা এনেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বের ৫ম শীর্ষ গম আমদানিকারক দেশ।
বাংলাদেশ রাশিয়া, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আর্জেন্টিনা থেকে গম আমদানি করে। চলতি বছর ভারত থেকেও গম আমদানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে বছরে ৩০/৩৫ লাখ টন পর্যন্ত গম আমদানি করে। তবে এ বছর রাশিয়া এবং ইউক্রেনে খরার কারণে গমের উৎপাদন কম হওয়ায় বাংলাদেশ ভিন্ন উৎস থেকে গমের সংস্থান করে। ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে গম আমদানির পরিমাণ অন্যান্য বছর থেকে কম হলেও তাদের যুদ্ধ পুরো বিশ্বের গমের বাজারকে অস্থির করে তুলছে।
ইউক্রেন এবং রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা দেশে তারা গম ভুট্টাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ এবং তাদের সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে দেশ দুইটি থেকে গম রপ্তানি অনেকটা তলানিতে ঠেকেছে। এতে করে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে যেসব দেশ গম কিনতো তারা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আর্জেন্টিনার মতো গম রপ্তানিকারক দেশগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অনেকেই ইন্ডিয়ার দিকে ঝুঁকছে। এই অবস্থায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি দেশই গমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যা গমের আন্তর্জাতিক বাজারকে অস্থির করে তুলছে।
দেশের শীর্ষ একজন গম আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে কানাডায় ৪৫০ ডলারে গমের দাম ৫০০ ডলারে চলে গেছে। অবশ্য পরের দিনই তারা ২০/২৫ ডলার করে কমিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ৪০০ ডলার থেকে ৪৪০ ডলারে নিয়ে গেছে। ভারত ৩২৫ ডলার থেকে দাম ৩৫৫ ডলারে নিয়ে গেছে। আবার দরাদরি করলে টুকটাক কিছু কমাচ্ছে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি খুবই সংকটজনক। রপ্তানিকারকেরা কথা বলতে চাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন ওই আমদানিকারক। তিনি বলেন, গমের বাজার অস্থির হলে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে খাদ্যশস্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদেরকে মারাত্মক এক সংকটের মাঝে ফেলেছে। এখনি আমাদেরকে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। দেরি করলে আমাদেরকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে। তিনি সরকারকে বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু-কিশোরদের সামনে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাবে এক কোটি পরিবার