বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তি অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। একাধারে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতার অন্যতম একজনও তিনি। কর্মজীবনের সব জায়গাতেই দীপ্ত ছড়িয়েছেন তিনি। কাজ করতেন সততার সাথে। তাই তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। শিক্ষকতা পেশা দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করে পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ হলেও সাংবাদিক হিসেবে তথা সম্পাদক হিসেবে দেশ ব্যাপী পরিচিত ছিলেন প্রথিতযশা এই ব্যক্তি। ১৯৬০ সালে দৈনিক আজাদীতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন সংবাদপত্র জগতের আরেক দিকপাল ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের অনুপ্রেরণায়। মাত্র দুই বছর পর ১৯৬২ সালে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব মৃত্যুবরণ করলে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ দৈনিক আজাদীর সম্পাদক হিসেবে হাল ধরেন। আমৃত্যু তিনি আজাদীর সম্পাদক হিসেবে ছিলেন। আমার জানা মতে অধ্যাপক খালেদ বোধ হয় এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যক্তি যিনি সুদীর্ঘ ৪১ বছর একটি পত্রিকার একটানা সম্পাদক ছিলেন। তাই তিনি আজাদীর সম্পাদক হিসেবে তথা সংবাদপত্র জগতের এক গৌরবোজ্জ্বল ব্যক্তি হিসেবে অধিক পরিচিত।
নির্লোভ ব্যক্তি ছিলেন অধ্যাপক খালেদ। ইচ্ছা করলে রাজনীতিবিদ হিসেবে অথবা সাংবাদিক হিসেবে অবৈধ ভাবে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হতে পারতেন। কিন্তু তিনি ঐ পথে পা বাড়ান নি। নিজের আদর্শ কে বিসর্জন দেননি। সততার সাথে জীবন পার করিয়েছেন। অধ্যাপক খালেদ কে কাছ থেকে দেখার এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উনার বক্তব্য শোনার অনেকবার সুযোগ হয়েছে আমার। কিন্তু আজাদী অফিসে সাক্ষাতের কথাটি আমার মনে গেঁথে আছে এখনও। আমি তখন আজাদী অফিসে যেতাম অধ্যাপক খালেদের আরেক উত্তরসূরী আরেক আদর্শবান সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদের কাছে। ২০০১ সালের দিকে একদিন সিদ্দিক ভাইয়ের পুরনো কক্ষে খালেদ সাহেবের সাথে দেখা। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেছিলাম। সিদ্দিক ভাই এবং খালেদ সাহেবের কথোপকথন শুনছিলাম তাদের সামনে বসে বসে। আজ দুই কৃতিমান সাংবাদিক নেই । কিন্তু তাদের কৃতকর্ম আজও বেঁচে আছে। থাকবে অন্তত কাল।
অধ্যাপক খালেদ জীবদ্দশায় অনেক সম্মাননা এবং পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন মরণোত্তর। আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি আমার প্রিয় আজাদীর সাবেক প্রিয় সম্পাদককে । আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুন।