শিক্ষা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়গুলো একটা অপরটার সাথে দারুণ এক মেলবন্ধন গড়ে দিয়েছে। এই যুথবদ্ধতার মাঝেও পরিবর্তনশীলতার ব্যাপারটি ঘটে চলেছে। যেটি অবশ্যই স্বাভাবিক ও অতিবাস্তব। আমাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ধারায় যুগের চাহিদার কারণে শিক্ষায় আধুনিকীকরণের বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। রূপান্তরের মাধ্যমে যুগোপযুগী টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকই হয়ে উঠতে পারে প্রধান ধারক বাহক। শিখন অভিজ্ঞতার ছায়ায় শিক্ষক তার জ্ঞান ভাণ্ডারের আলোয় শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দিতে পারে সুনির্দিষ্ট কৌশল। যাতে করে শিক্ষার্থী বিজ্ঞান মনস্ক ভাবনার আলোকে প্রবল আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৫ কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। এই বিপুল শিক্ষার্থীকে সম্পদশালী রূপে গড়ার জন্যে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাও বড়ো চ্যালেঞ্জ। আমরা জানি, কোভিড–১৯ ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর যথেষ্ট চাপ পড়ে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পৌঁছুতে হলে মান সম্মত শিক্ষার ওপর আমাদের ওপর অবশ্যই জোর দিতে হবে। এজন্যে শিক্ষক, শিক্ষা কারিকুলাম, সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম সর্বোপরি আধুনিক বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে হলে শিক্ষায় রূপান্তরের কোনো বিকল্প নেই। অবশ্যই আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে পা বাড়াতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে যদি আমরা স্বাগত জানাতে চাই তবে শিক্ষার্থীদের সার্বিক শিক্ষা কারিকুলামের পরিবর্তনের দিকটা অত্যাবশ্যক। তথ্য প্রযুক্তি তো বটেই সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণমূলক উদ্ভাবনী মনোভাব আমাদের আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সুদূরপ্রসারী জায়গায় পৌঁছাবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে যেমন ঢেলে সাজাতে হবে, শিক্ষানীতির ইতিবাচক বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় এগোতে হবে ধাপে ধাপে। তবে সেই সময়টা আর বেশি দূরে নয়, এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠাগামো, ব্যবস্থাপনাগত মান উন্নয়ন, কারিগরি ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন সুনাগরিক গড়ার পথ প্রশস্ত করার সময়। যাই বলি না কেন, আমাদের শিক্ষকদের যদি যথাযথ সম্মানী, প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা ও অন্তুর্ভুক্তির জায়গায় যদি পৌঁছে দেয়া না যায় তাহলে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে কখনো পৌঁছুতে সক্ষম হবো না। নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষকদের নেতৃত্ব বিকাশের পথ যাতে গতিশীল হতে পারে। পর্যাপ্ত কারিগরী সম্পদ, উপকরণ, দক্ষ ও কার্যকর পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ পুনরুদ্ধারের শিক্ষায় নব জাগরণ তুলতে হবে। শিক্ষায়তনগুলোতে মান সম্মত পরিচালনা পর্ষদ গড়ে তোলা, ছাত্র–শিক্ষক বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক স্নেহ ও শ্রদ্ধাবোধের জায়গাগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচণ্ডভাবে ভাববার বিষয়। এখনকার উন্মুক্ত আকাশ দুনিয়ায় আমরা হুটহাট করেই অনেক কিছু ভাইরাল হতে দেখি। তাতে করে বিশাল একটা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে যায় । তখন যথেষ্ট বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ে আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলো। এ বিষয়গুলোও যথেষ্ট ভাবতে নীতি নির্ধারক সহ সব মহলকে। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপাদান হলো শিক্ষার্থী। পাশাপাশি শিক্ষক হলো প্রধান কারিগর। অভিভাবকরা হলেন শক্তির অন্যতম উৎস। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষক–শিক্ষার্থী–অভিভাবক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার মাধ্যমে কারিগরি প্রযুক্তিগত বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। আর তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমাদের এগিয়ে যেতে হলে প্রথমেই এসডিজি–৪ এসডিজি–৪’র লক্ষ্য– সবার জন্য একীভূত এবং সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ প্রসার ঘটাতে হবে। সংগত কারণেই জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে সবার মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সক্ষম হবো। শুধু তাই নয়, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক আঞ্চলিক পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ক্ষেত্রটিও গড়ে উঠবে নিঃসন্দেহে ।
লেখক : কবি ও শিশুসাহিত্যিক, শিক্ষা ও উন্নয়ন গবেষক।